ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

কোনো শিক্ষার্থী আসেনি মধুখালীর সেই স্কুলে

কোনো শিক্ষার্থী আসেনি মধুখালীর সেই স্কুলে

ফাইল ছবি

 হাসানউজ্জামান ও রাশেদুল হাসান কাজল, ফরিদপুর

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:১৭ | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ০৯:২৭

ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর সেখানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও কোনো শিক্ষার্থী যায়নি পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পুরো এলাকা এখনও অনেকটা জনশূন্য।

পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই নির্মাণ শ্রমিক দুই ভাইকে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হন ৫ শ্রমিক।
পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পঞ্চপল্লী কালীমন্দিরের মাঝখানে একটি বিশাল বটগাছ। স্কুলের মাঠে রাখা নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বাঁশ, রড ও কাঠ। এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণি ও শিশু শ্রেণির কক্ষে থাকতেন নির্মাণ শ্রমিকরা। সেখানেই তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। কক্ষ দুটির দরজা ও জানালা ভাঙা। পুলিশ কক্ষ দুটি ও মন্দির ‘ক্রাইম সিন’ হিসেবে ঘিরে রেখেছে। এলাকায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।
রমজান, ঈদ ও তাপদাহের ছুটি শেষে গতকাল সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। পঞ্চপল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে গতকাল কথা হয় প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) গীতা রানী বিশ্বাস, সহকারী শিক্ষক অণিমা রানী বালা, চায়না ভাদুরী এবং স্বপন কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে। তবে এদিন স্কুলে আসেনি কোনো শিক্ষার্থী। গীতা রানী বিশ্বাস বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৭টায় স্কুলে এসেছি। অন্য শিক্ষকদেরও আগে আসতে বলি। সকাল ৮টায় ক্লাস শুরুর কথা ছিল। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীও স্কুলে আসেনি। আসবে কীভাবে! কোনো শিশুই তো এলাকায় নেই। দু’একজন থাকলেও ভয়ে-আতঙ্কে স্কুলে আসেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকাটি পুরুষশূন্য; আসলে জনশূন্য। শিশুরাও বাবা-মায়ের সঙ্গে আছে। বৃদ্ধ ছাড়া কেউ এলাকায় নেই। অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, কিন্ত ফোন বন্ধ পাচ্ছি। সমস্যা সমাধানে হয়তো কয়েক দিন সময় লাগবে।’ শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস জানান, স্কুলে মোট শিক্ষার্থী ১০৪ জন। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীও স্কুলে আসেনি। তিনি বলেন, ‘হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাটি এখন পুরুষশূন্য। ঘটনার ১০ দিন পরও কেউ বাড়ি ফেরেনি। পুরুষরা বাড়ি ছাড়ার সময় স্ত্রী-সন্তানদেরও নিয়ে গেছেন। এলাকায় পুলিশ, এপিবিএন, বিজিবি ও র‍্যাব টহল দিচ্ছে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, ‘পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। শিক্ষার্থীদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য শিক্ষকদের বলা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে আশা করি।’

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘পঞ্চপল্লীর বাসিন্দাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে মাইকিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে।’ হামলা ও হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

গত ১৮ এপ্রিল রাতে পঞ্চপল্লীর একটি কালীমন্দিরের প্রতিমায় আগুন দেওয়ার খবর ছড়িয়ে লোকজন জড়ো করা হয়। আগুন দেওয়ার জন্য সন্দেহ করা হয় পঞ্চপল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ নির্মাণ শ্রমিককে। পরে অবরুদ্ধ করে তাদের বেদম পেটানো হয়। পুলিশ আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুরের হাসপাতালে পাঠালে আশরাফুল ও এরশাদুল নামে দুই ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। প্রশাসন বলছে, শ্রমিক পেটানোর এ ঘটনায় অংশ নেন পঞ্চপল্লী ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ও মেম্বার অজিত কুমার বিশ্বাস। 
হত্যায় জড়িতরা শনাক্ত হয়েছে : র‍্যাব
ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লিতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ শুরু করেছে র‍্যাব। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। অচিরেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত পরিচয় পর্ব ও মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম এ কথা বলেন।
দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান ও সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার। তাদের গ্রেপ্তারে র‍্যাব কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে জানতে চাইলে র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এই হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হতে পারে। তবে অপরাধী গ্রেপ্তার হলেই সব বেরিয়ে আসবে।

আরও পড়ুন

×