ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

খুলনায় তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড

‘রোদি দাঁড়ানোই যাচ্ছে না, বারবার গলা শুকোয় যাচ্ছে’

‘রোদি দাঁড়ানোই যাচ্ছে না, বারবার গলা শুকোয় যাচ্ছে’

ক্লান্ত শরীরে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন শ্রমিকরা - সমকাল

মামুন রেজা, খুলনা

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৪ | ১৭:০৫ | আপডেট: ০১ মে ২০২৪ | ১৭:০৭

খুলনা সদর হাসপাতাল ঘাটে বুধবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে ট্রলার থেকে ইট নামাচ্ছিলেন শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন। ঘামে তার জামা ও লুঙ্গি ভিজে একাকার। একই কাজ করছিলেন আরও ৩-৪ জন শ্রমিক। দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজ ভয়াবহ গরম পড়িছে। রোদি দাঁড়ানো যাচ্ছে না। বারবার গলা শুকোয় যাচ্ছে, পানি খাতি হচ্ছে। এতো রোদ আর গরম আগে কোনোদিন ছিল না।’

দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলার সময় শ্রমিক নজরুল ইসলাম ও শহিদ শেখ বলেন, ‘বাবারে কী গরম, আর সহ্য হচ্ছে না। এতো রোদি কি কাজ করা যায়। না কইরেও তো উপায় নেই। কাজ না করলি খাবো কী?’

কিছুক্ষণ কাজ করার পর ক্লান্ত শরীর নিয়ে পাশে থাকা গাছের ছায়ায় ইটের ওপর গিয়ে বসেন তারা। একটু জিরিয়ে আবার ইট নামানোর কাজে যোগ দেন।

খুলনা আবহাওয়া অফিস জানায়, খুলনায় বুধবার সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দুপুরে নগরীর পুরাতন যশোর রোড, খানজাহান আলী রোডসহ কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় যানবাহন ও লোকের চলাচল নেই বললেই চলে। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া পথচারীরা হাঁটছেন মাথায় ছাতা দিয়ে। বাতাসে যেন আগুনের হলকা। প্রচণ্ড গরমে সবারই হাঁসফাঁস অবস্থা।

এ সময় সড়কের বিভিন্ন মোড়ে শরবত ও ডাব বিক্রি হতে দেখা যায়। কিন্তু শরবতের দোকানে তেমন লোক নেই। আর ডাবের দোকানে ২-১ জন ক্রেতা গেলেও দাম শুনে বিরক্ত হয়ে চলে যান। একেকটি ডাবের দাম চাওয়া হচ্ছে ১০০ থেকে দেড়শ’ টাকা।

রিকশাচালক বারেক মৃধা বলেন, আজ ২৫-৩০ বছর ধরে রিকশা চালাই। আগে কোনোদিন এতো রোদ আর গরম দেখিনি। রোদি গা পুড়ে যাচ্ছে। একজন যাত্রী টানার পর ছায়ায় বইসে কিছুক্ষণ জিড়েই (বিশ্রাম) নিতি হচ্ছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. আমিরুল আজাদ জানান, তাদের কাছে তাপমাত্রার ২৫ বছরের তথ্য রয়েছে। ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা এই প্রথম। এর আগের তথ্য তাদের কাছে নেই।

তিনি আরও জানান, বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপপ্রবাহ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। আগামী ৫ মে বৃষ্টি হতে পারে।

কয়েকটি ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোদ আর গরমের কারণে তারা নির্মাণশ্রমিক পাচ্ছেন না। ফলে নির্মাণাধীন অনেক ভবনেই কাজ ফেলে রাখতে হচ্ছে।

এদিকে প্রচণ্ড গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তারা জ্বর, সর্দি-কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এর ফলে খুলনা শিশু হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে।

এ ছাড়া গরমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বেশিরভাগ নলকূপে পানি উঠছে না। ঘেরগুলোর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় চিংড়ি মারা যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন

×