প্রাণ হাতে নিয়ে পারাপার

চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি মহাসড়কের ফটিকছড়ি জুবিলী স্কুলের সামনে ঝুঁকি নিয়ে পারাপারা হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ছবি: সমকাল
ইকবাল হোসেন মনজু, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪ | ১৫:৫১ | আপডেট: ১৫ মে ২০২৪ | ১৪:৩৮
ফটিকছড়ি পৌর সদরের ধুরুং খুলশী লায়ন্স উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন তারা। পদচারী সেতু না থাকায় এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের স্কুল পাঠিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কটি প্রশস্ত করা হলেও সড়কের স্কুল অংশে কোনো ফুট ওভারব্রিজ তৈরি করা হয়নি। এমনকি সড়কে গতিরোধকও নেই। এতে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে ছোটবড় যানবাহন।
পেড্রোলো খুলশী লায়ন্স কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষিকা উম্মে সালমা বলেন, ‘স্কুলের ভেতরের দায়িত্ব আমাদের। বাইরে থেকে যে যার মত আসে এবং নিয়ে যায়। তারপরও আয়া–দপ্তরিরা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করে।’
ধুরুং খুলশী লায়ন্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) এম এ বারেক বলেন, ‘বিষয়টি আমরা স্ব স্ব দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয়। আমরা চাই এখানে একটা গতিরোধক বা ফুট ওভার ব্রিজ তৈরি করা হোক।
জানা গেছে, উত্তর চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক। ফটিকছড়ি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ঐতিহ্যবাহী ধুরুং খুলশী লায়ন্স উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে আরও দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একটি কেজি স্কুল অপরটি ধুরুং জুবিলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই ৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিদিন স্কুল ছুটি হলে শত শত শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রাম -খাগড়াছড়ি মহাসড়ক পার হয় পায়ে হেঁটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক অত্যন্ত ব্যস্ত একটি সড়ক। স্কুল ছুটি হলেই শত শত শিক্ষার্থী সড়কটি পারাপারের জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। অনেক শিক্ষার্থী আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে সড়কটি পার হয়। কিছু কিছু অভিভাবক ছেলে মেয়ের হাত ধরে তাদের সড়কটি পার করিয়ে দেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে দপ্তরী নুরুল আবছার ও আয়া রীতা রাণী লাল পতাকা হাতে নিয়ে দ্রুতগতির গাড়ি থামানোর চেষ্টা করেন। অনেক চালক গাড়ি থামালেও বেশিরভাগই গাড়ি না থামিয়ে চলে যান।
স্কুল শিক্ষার্থী আবু বকর, সাবিনা ইয়াসমিন, আয়শা আকতার, এনায়েত হোসেন বলে, ফুট ওভারব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হতে হয়। অনেকে সড়ক পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। মহাসড়ককের পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরার আগেই ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা জরুরি।
সুমাইয়া আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলে, দুর্ঘটনা রোধে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের এ অংশে একটি ফুট ওভারব্রিজ থাকলে যাতায়াতে সুবিধা হত। স্কুলের সামনে সড়কটির কোনো অংশেই গতিরোধক না থাকায় বেপারোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল করে। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি পারাপার করতে হচ্ছে।
ধুরুং জুবিলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘এলাকায় অনেকগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের রাস্তা পার হতে হয়। আমরা এর আগে উপজেলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি জানিয়েছি। এরপর গতিরোধক তৈরির প্রকল্প পাস হলেও গত একবছরেও কাজ শুরু হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘এ কাজটি করার দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের। আমরা সওজকে বিষয়টি জানাব।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক বিভাগের ফটিকছড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল নোমান পারভেজ বলেন, ‘এ ব্যাপারে কেউ আমাদের কাছে আগে আবেদন করেননি বা অবহিত করেননি। স্থানীয়ভাবে দাবি জানালে বা এমপি মহোদয় ডিও লেটার দিলে তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া সহজ হবে।’
- বিষয় :
- চট্টগ্রাম
- ফটিকছড়ি
- রাস্তা পারাপার