ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

জিম্মিদশা নিয়ে নাবিক নুরউদ্দিন

এখনও ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠি

এখনও ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠি

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের জেনারেল স্টুয়ার্ড নুরউদ্দিন ও তার স্ত্রী। ছবি: সমকাল

সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪ | ২২:৪১ | আপডেট: ১৬ মে ২০২৪ | ২৩:২৮

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের জেনারেল স্টুয়ার্ড নুরউদ্দিন এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। মুক্তির পর বাড়ি ফিরে তিনি চিকিৎসক দেখিয়েছেন। কিন্তু এখনও ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠছেন বলে জানিয়েছেন।

দুঃসহ সেই দিনের বর্ণনায় নুরউদ্দিন সমকালকে বলেন, জলদস্যু সবাই ভারী অস্ত্রে সজ্জিত থাকত। বিমান বিধ্বংসী রকেট লঞ্চার ও মেশিনগান নিয়েই জাহাজে উঠত। এসব দিয়ে আমাদের ভয় দেখাত। কখনও কখনও মাথায় তাক করত মেশিনগান। একসঙ্গে এত অস্ত্র জীবনে দেখিনি। তবে মাঝেমধ্যে তারা মজাও করত। স্পিডবোটে করে জীবিত দুম্বা এনে জাহাজেই জবাই এবং বিশেষ কায়দায় সেদ্ধ করে নিজেরা খেত, আমাদেরও খেতে বলত।

একান্ত আলাপচারিতায় জিম্মিদশার ৩৩ দিনের নানা ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন তিনি। জলদস্যু ও নাবিকদের খাবারের দায়িত্বে থাকায় খুব কাছ থেকে সবার আচরণ পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হয়েছে নুরউদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘নির্দেশ না মানায় আমাদের দুই সিনিয়র নাবিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে জলদস্যুরা। একজনকে থাপ্পড়, আরেকজনকে মেশিনগানের বাঁট দিয়ে আঘাত করেছিল। তবে দাগ হয় কিংবা গুরুতর আহতের মতো কোনো আঘাত তারা করেনি।’

নুরউদ্দিন বলেন, ‘জলদস্যুদের কেউ রোজা রাখত না, নামাজও পড়ত না। কিন্তু খাওয়ার আগে হালাল কিনা, জিজ্ঞেস করে নিত। তারা আমাদের ব্রিজে কিংবা ক্রু ম্যাচ রুমে থাকতে দিত। নিজেরা থাকত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে। পাইলটের রুম, অফিসার লাউঞ্জ, অতিরিক্ত কেবিন রুম ও অফিসার ম্যাচ রুমে থাকত তারা। মাঝেমধ্যে আমাদের কেবিন রুমে যেতে দিত। কথা বলার সুবিধার্থে তাদের সাংকেতিক নামে ডাকতাম আমরা। ওদের কমান্ডারের নাম দিয়েছিলাম উটপাখি, আরেকজনের ছেঁচড়া।’

এখন কেমন আছেন– প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখনও ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠি। মনে হয়, কেউ অস্ত্র তাক করে আছে। জলদস্যুদের আপ্যায়নের দায়িত্বে ছিলাম আমি ও চিফ কুক। আমরা তাদের খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি। পান থেকে চুন খসলেই রুদ্ররূপ ধারণ করত তারা। তাদের একজন মজা করলে অন্যজন কঠোর থাকত।’

ঘটনার দিন প্রসঙ্গে নুরউদ্দিন বলেন, ‘প্রথমে ১২ জলদস্যু আমাদের জাহাজে ওঠে। সোমালিয়ার উপকূলে যাওয়ার পর তিন ধাপে আরও ৫০-৫৫ জন ওঠে। যেদিন জাহাজ ছেড়ে জলদস্যুরা চলে যায়, গুনে দেখেছি, ৯ বোটে ৬৫ জন ছিল।’

মুক্তিপণ পাচ্ছে নিশ্চিত হওয়ার পর জলদস্যুদের আচরণে কী পরিবর্তন আসে– প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঈদের নামাজ পড়ার একটি ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর খুব রুদ্ররূপ ধারণ করে জলদস্যুরা। এর পর থেকে খুব কঠোর আচরণ করে। শেষ ১০-১২ দিন ভারী অস্ত্র নিয়ে পালাক্রমে পাহারা দিত। তবে ভালো ব্যবহার করেছে।’

নুরউদ্দিন আরও বলেন, ‘ছোট ছোট কিছু কাণ্ড ও পাতা চিবিয়ে খেত জলদস্যুরা। এটি নাকি মাদক, কেনিয়া থেকে আনা। আবার ছাই রঙের এক ধরনের পাউডার জিহ্বার মধ্যে রেখে স্বাদ নিত। এটিও সম্ভবত নেশাদ্রব্য। তাদের কখনও তরল মাদক নিতে দেখিনি। তবে প্রচুর চা পান করে জলদস্যুরা।’

আরও পড়ুন

×