র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু
লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন নিয়ে সবাই চুপ

সুরাইয়া খাতুন
কিশোরগঞ্জ ও নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪ | ০০:৩৬
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে র্যাবের হেফাজতে সুরাইয়া বেগম (৫২) নামের এক নারী আসামির মৃত্যুর ঘটনায় ১২ ঘণ্টা পর মরদেহের সুরতহাল করা হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ওই হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল করা হলেও প্রতিবেদনের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক বা পুলিশ কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে র্যাব-১৪ কার্যালয়ে নিয়ে আসার পর শুক্রবার সকালে সুরাইয়ার মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে র্যাব সদস্যরা তাঁকে মৃত অবস্থায় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ। সুরাইয়া নান্দাইল উপজেলার বরুণাকান্দি গ্রামের আজিজুল হকের স্ত্রী। পুত্রবধূ রেখা আক্তার হত্যা মামলার ৩ নম্বর আসামি ছিলেন তিনি।
জেলা কালেক্টরেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত জাহান শুক্রবার সন্ধ্যায় নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ভৈরব থানার ওসির কাছে হস্তান্তর করেন। তবে সুরতহালে মৃত্যুর কোনো লক্ষণ বোঝা গেছে কিনা– প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সেটি জানা যাবে। একই কথা বলেন ভৈরব থানার ওসি সফিকুল ইসলাম এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. মোজাহারুল ইসলামও। তবে র্যাব বলছে, গরমে স্ট্রোক করে সুরাইয়ার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
ভৈরব থানার ওসি সফিকুল ইসলাম জানান, সাধারণভাবে পুলিশই সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। যেহেতু র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় সুরাইয়া বেগম মারা গেছেন, সে কারণে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করানো হয়েছে। এ বিষয়ে ভৈরব থানায় আপাতত একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ওসি বলেন, শনিবার সকালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দুপুরে মর্গেই গোসল শেষে কাফনের কাপড় পরিয়ে মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে গেছেন নিহতের ভাশুর সাইফুল ইসলাম ও প্রতিবেশী আল আমিন।
এদিকে, দুপুর পৌনে ২টার দিকে একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে সুরাইয়ার লাশ উপজেলার বরুণাকান্দি গ্রামে তাঁর স্বামীর বাড়িতে পৌঁছায়। জানাজা শেষে লাশ দাফনের উদ্যোগ নিলে নিহতের ছেলেমেয়ে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, তাদের সুস্থ মাকে থানায় ডেকে নিয়ে র্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তারের নাটক সাজিয়েছে পুলিশ। যারা তাদের মাকে লাশ বানিয়ে কফিনবন্দি করে বাড়িতে পাঠিয়েছে, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত লাশ দাফন করতে দেবেন না। এ সময় সেখানে কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরে সেখানে উপস্থিত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন ভূঁইয়া ও নিহতের দেবর আবদুল আওয়াল সবাইকে বুঝিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।
এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ওসি আবদুল মজিদ জানান, তিনি স্বজনদের আশ্বাস দিয়েছেন, ময়নাতদন্তে আঘাতজনিত কারণে মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত সহায়তা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল নান্দাইল উপজেলার বরুণাকান্দি গ্রামে যৌতুকের দাবিতে রেখা বেগম নামের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে স্বামী তাইজুল ইসলাম, শাশুড়ি সুরাইয়া বেগম ও শ্বশুর আজিজুল হকের বিরুদ্ধে। গত ২ মে রেখার মা রমিছা বেগম ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। পরে ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
ওই মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে তাজুল ইসলাম এবং নান্দাইল থেকে তাঁর মা সুরাইয়াকে র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেন। কিন্তু শুক্রবার সকালে র্যাব ক্যাম্প থেকে সুরাইয়াকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ভৈরব ক্যাম্পের র্যাব কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ফাহিম ফয়সাল বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে র্যাবের ময়মনসিংহ কার্যালয় থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।
র্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আশরাফুল কবির জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে শুক্রবার ভোরে সুরাইয়া বেগম বুকে ব্যথা অনুভব করেন। এরপরই তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছিল।
- বিষয় :
- নারীর মৃত্যু