মুখ থুবড়ে পড়েছে বাজার মনিটরিং
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দুই মাস তালাবদ্ধ

লোগো
দেবাশীষ ভট্টাচার্য, শেরপুর
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪ | ০০:৩৩
শেরপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কার্যালয় প্রায় দুই মাস ধরে তালাবদ্ধ। এখানে প্রায় দুই বছর ধরে সহকারী পরিচালকের পদ ফাঁকা পড়ে আছে। দুই মাস আগে একমাত্র কর্মচারীকে ময়মনসিংহ জেলায় বদলি করায় অফিসে বর্তমানে তালা ঝুলছে। প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ থাকায় পুরো জেলায় বাজার মনিটর কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদে ২৬ নম্বর আইন হিসেবে পাস হয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন। এর অধীনে আধা বিচারিক সংস্থা হিসেবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। জনগণকে দ্রুত সেবাদান, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কাজ করে এই অধিদপ্তর। ভোক্তার অধিকার বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধ ও প্রতিকারে নিয়মিত বাজার তদারকি করে, ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তার দায়ের করা অভিযোগ তদন্তের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা এবং ভেজাল রোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠানটি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুর ডিসি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার দ্বিতল ভবনের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যালয়ে তালা ঝুলছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী ও অভিযোগ দিতে আসা ভোক্তারা জানান, দেড় মাস ধরে অফিস তালাবদ্ধ। ফলে অফিসের সব কার্যক্রম বন্ধ। পাশের জেলা জামালপুরের সহকারী পরিচালক আরিফুল ইসলাম অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন শেরপুরে। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরকে গত এপ্রিল মাসে ময়মসিংহে বদলি করা হয়। তার পর একা বাজার মনিটর করা সম্ভব নয় বলে অফিসে আসেন না সহকারী পরিচালক। শুধু তাই নয়, গত দেড় বছর ধরে এ কমিটির কোনো সভাও হচ্ছে না। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেরপুরের সহকারী পরিচালক অন্য জেলায় বদলি হয়ে যান। এই পদে আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সেই থেকে ভোক্তারা বিভিন্ন সময় নাজেহাল হচ্ছেন, প্রতিকার পাচ্ছেন না।
অভিযোগ দিতে আসা শহরের সোহাগ দে নামে এক যুবকের ভাষ্য, তিন দিন ধরে এসে অফিসে তালা ঝুলতে দেখতে পাচ্ছেন তিনি। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেন না। ফলে অভিযোগ দিতে পারছেন না তিনি।
বাজার মনিটরিং ও ভেজালবিরোধী অভিযান না থাকায় অধিকারবঞ্চিত হচ্ছেন ভোক্তারা। তাদের দাবি, বাজার মনিটরিং না থাকায় হু হু করে বাড়ছে পণ্যের দাম। ভেজাল পণ্য বিক্রি হচ্ছে যত্রতত্র। বাধ্য হয়ে ক্রয় করছেন এবং খাচ্ছেন ভোক্তারা।
বৃহস্পতিবার সকালে শহরের নবীনগর কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক ভোক্তার সঙ্গে মুরগি বিক্রেতার বাগ্বিতণ্ডা চলছে। একটি দোকানে বয়লার মুরগির দাম চাওয়া হচ্ছে ২২০ টাকা। পাশের দোকানেই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। কেন দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে জানতে চান ক্রেতা সুমন খান। কিন্তু মুরগি বিক্রেতা বলছেন, ‘ইচ্ছে হলে নেন, নইলে চলে যান।’ এ কথায় অপমান বোধ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীর মধ্যে প্রায় হাতাহাতি লাগার উপক্রম। ভোক্তা সুমন বলেন, ‘বাজারে সরকারিভাবে মনিটরিং থাকলে তাদের অপমানিত হতে হতো না। দরকষাকষি করলেই বিপদ। ব্যবসায়ীরা অপমান করেন, এমনকি মারতেও আসেন।’
রিকশাওয়ালা মাসুদ মিয়া শহরের রঘুনাথ বাজারের একটি দোকানে ডিম কিনতে এসেছেন। সেখানে দোকানি এক ডজন ডিমের দাম ১৪৪ টাকা চাচ্ছেন। এ সময় মাসুদ মিয়া দোকানিকে বলছেন, ‘নয়আনী বাজারে ডিম ১৩৮ টাকা। আপনি কেন ১৪৪ টাকা নেবেন?’ এ নিয়েও ঝামেলা দেখা গেল। মাসুদ মিয়া জানান, জিনিসপত্রের দাম ইচ্ছামতো বাড়ানো হচ্ছে। অথচ প্রশাসন নীরব।
কথা হয় জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জামলাপুরের সহকারী পরিচালক, শেরপুরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুধু শেরপুরে নয়, দেশের ১৭টি জেলায় সহকারী পরিচালক নেই। ফলে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘জামালপুরের সাতটি উপজেলা দেখে শেরপুরের পাঁচটি উপজেলা একা মনিটর করা খুবই কষ্টকর। তা ছাড়া শেরপুরে একজন কর্মচারীও নেই। কী করে একা বাজার মনিটর করব? মাঝে মধ্যে গিয়ে একজন চালককে নিয়ে বাজারে যাচ্ছি। তিনি লিখতে-পড়তে পারেন না। কোনোরকমে চালিয়ে নিচ্ছি।’
শেরপুরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক আবদুল্লাহ আল খায়রুম। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে জানানো
হয়েছে। আশা করছি, সমস্যার সমাধান হবে।’ তাঁর ভাষ্য, একজন কর্মকর্তা দুই জেলার দায়িত্বে আছেন। তিনি যেদিন জামালপুর থাকেন, সেদিন অফিস বন্ধ থাকে। সমস্যা সমাধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে দ্রুত বাজার মনিটর করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
- বিষয় :
- ভোক্তা অধিকার