বাঁশখালীর সাগরে অবাধে চিংড়ি পোনা শিকার

ফাইল ছবি
আবদুল মতলব কালু, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৪ | ২৩:৪৪
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাগর উপকূলে অবাধে চলছে চিংড়ির পোনা শিকার। আইন অনুযায়ী, রেণু পোনা আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু লাভজনক বিধায় এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও সচেতনতার অভাবে বাঁশখালীর নিম্ন আয়ের বহু মানুষ এখন এতে জড়িয়ে পড়েছেন। এমনকি স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুরাও রেণু পোনা সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাঁশখালীর সাগর থেকে সংগৃহীত এসব চিংড়ি রেণু চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে প্রায় কয়েক কোটি টাকা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চিংড়ি রেণু ধরতে এসব মানুষকে মশারি জাল সরবরাহ করছে। এসব জাল দিয়ে চিংড়ি রেণু আহরণকালে অন্য প্রজাতির মাছের পোনাও উঠে আসছে, যা মৎস্যসম্পদের জন্য হুমকিস্বরূপ।
বাঁশখালীতে ১০০ চিংড়ি পোনা ৩৫/৪০ টাকায় বিক্রি হয়। অনেক নিম্ন আয়ের পরিবার এই চিংড়ি রেণু ধরেই দৈনিক ৬০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে। বিশেষ করে স্বামী পরিত্যক্ত, বিধবা নারী ও তাদের সন্তানরা সংসারের অভাব মেটাতে চিংড়ি রেণু সংগ্রহ করছে।
স্থানীয়রা জানান, বাঁশখালীতে দুই ধরনের চিংড়ি পোনা পাওয়া যায়। লবণাক্ত পানিতে বাগদা ও মিষ্টিপানিতে গলদা চিংড়ির রেণু মেলে। বাঁশখালীর ছনুয়া, সরল, গণ্ডামারা, বাহারছড়া ও খানখানাবাদে পাওয়া যায় বাগদার পোনা। অন্যদিকে পুকুরিয়া ও সাধনপুরে শঙ্খ নদে পাওয়া যায় গলদার রেণু।
লবণপানিতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সত্ত্বেও নিম্ন আয়ের মানুষ যে শুধু চিংড়ি রেণু ধরার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নয়; তাদের শ্রমের ন্যায্যমূল্যও দেওয়া হচ্ছে না। অনেকেই জানিয়েছেন, মহাজনরা পোনা মারা যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত পোনা নিয়ে নিচ্ছে। জানা গেছে, বাঁশখালীর উপকূলীয় ইউনিয়ন গণ্ডামারা, ছনুয়া, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদ ও সাধনপুর এলাকায় শতাধিক মহাজন ডকের (পোনা জমা রাখার আধার) মাধ্যমে চিংড়ি রেণু সংরক্ষণ করে পরে তা দেশের নানা প্রান্তে পাঠান। এখানে হ্যাচারি না থাকায় কোটি কোটি চিংড়ি পোনা ডকেই মজুত অবস্থায় মারা যায়।
চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী ফজল কাদের, আনছুর আলী ও রুহুল কাদের জানান, বাঁশখালীতে যদি হ্যাচারি থাকত, তাহলে একটি পোনাও মারা যেত না। পোনা সংগ্রহকারীরাও পেত ন্যায্যমূল্য।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি পোনা সংগ্রহ আপাতত বন্ধ রয়েছে। চিংড়ি রেণু সংগ্রহকালে বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য পোনা যাতে ধ্বংস না হয়, সে জন্য আমরা সংগ্রহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিচ্ছি।
- বিষয় :
- চিংড়ি