অস্ত্রোপচার করে পিয়ন, রোগীর মৃত্যু

ছবি: সমকাল
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪ | ২১:৪১
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পিয়ন মেহেদী হাসান শাহীনের অস্ত্রোপচারে ময়দান আলী নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সন্ধ্যায় শ্রীবরদী পৌর শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকসহ প্রভাবশালী একটি চক্র। তবে ব্যর্থ হয় তারা। ঘটনা জানাজানি হলে শনিবার রাতেই থানায় অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগীর পরিবার।
এ ঘটনায় আজ রোববার দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। পালিয়েছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চার মালিক ও মেহেদী হাসান শাহীন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী ময়দান আলী (৫২) শ্রীবরদী উপজেলার মামদামারী গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পিয়ন মেহেদী হাসান শাহীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ কতিপয় অসাধু কর্মচারীর সঙ্গে মিলে রোগীদের অস্ত্রোপচার করে আসছিলেন। ছোটখাটো থেকে জটিল অস্ত্রোপচার সবই করতেন। হাসপাতালের পাশেই চৌরাস্তা মোড়ে ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে যেতেন এই কর্মচারী। অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসা দিতেন। শনিবার বিকেলে ময়দান আলী তাঁর বুকের বাঁ পাশে একটি টিউমার চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রোগী দেখার পর তাঁকে শেরপুর সদর হাসপাতালে যেতে বলেন। এ সময় পিয়ন শাহীন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কৌশলে রোগী ও তাঁর পরিবারকে তিনি জানান, ৫ হাজার টাকা দিলে অস্ত্রোপচার করে দেবেন তিনি। এতে কোনো ক্ষতি হবে না। এ সময় ৬-৭ জন দালাল রোগীর স্বজনদের আশ্বস্ত করেন যে, ছোটখাটো বিষয়ে শেরপুর যেতে হবে না।
ময়দান আলীর চাচাতো ভাই আব্দুর রশিদের ভাষ্য– হাসাপাতাল থেকে শেরপুরে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে শাহীনসহ কতিপয় দালাল তাদের ম্যানেজ করে এবং ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে কোনো অপারেশন থিয়েটার ছিল না। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অফিস কক্ষের টেবিলে তাঁর ভাইকে অবশ করার জন্য ইনজেকশন দেন শাহীন। পরে টিউমারে অস্ত্রোপচার শুরু করেন। এ সময় রোগীর খিঁচুনি শুরু হলে ফের আরেকটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। এতে মারা যান ময়দান আলী।
রোগীর মৃত্যুর পর দ্রুত সটকে পড়েন শাহীন ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষ। এর পর বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে লোকজন থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় সাতজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেছেন ময়দান আলীর ছেলে মোস্তফা কামাল। রোববার পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামি জুয়েল ও তামিমকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যরা পলাতক। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম খান সিদ্দিকী বলেন, হত্যা মামলায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কথা হয় শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাহাত চৌধুরীর সঙ্গে। তাঁর মদদে অফিসের পিয়ন শাহীন দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রোপচারের মতো জটিল কাজ করছেন স্থানীয়দের এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সত্য নয়। আমি জানতাম না, শাহীন অস্ত্রোপচার কাজে জড়িত।’
সিভিল সার্জন অনুপম ভট্টাচার্যের ভাষ্য, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
- বিষয় :
- শেরপুর
- অস্ত্রোপচার
- মৃত্যু