বন্যায় তলিয়ে গেছে ১৩২ গ্রাম
রৌমারী-রাজীবপুরে ৭৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী

বন্যায় বসতভিটা তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশু নিরাপদস্থানে সরিয়ে নিচ্ছে একটি পরিবার।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪ | ১৬:২৭ | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪ | ১৭:০৪
ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ১৩২ গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে প্রায় তিন হাজার হেক্টর ফসলি তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ইতিমধ্যেই ৭৬ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়ন, চরশৌলমারী ইউনিয়ন ও বন্দবেড় ইউনিয়নসহ ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ৭০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের মধ্যে রয়েছে, যাদুরচর চাক্তাবাড়ি, যাদুরচর নতুনগ্রাম, ধনারচর হাটখোলাপাড়া, গোলাবাড়ি আকন্দপাড়া, ধনারচর কাটিয়ামারী, ধনারচর চরেরগ্রাম, কোমড়ভাঙ্গি পুরাতনপাড়া, ধনারচর নতুনগ্রাম, ধনারচর পশ্চিমপাড়া, চর গেন্দার আলগা, ঘুঘুমারী, সুখেরবাতি, নয়াপাড়া, পশ্চিম খেদাইমারী, মশালের চর, ফলুয়ারচর, বাঘমারা, পালেরচর, বলদমারা গ্রাম।
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ার কারণে রোববার পর্যন্ত উপজেলার এক হাজার ২৭৪ হেক্টর ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে
বন্যায় রাজীবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন, কোদালকাটি ইউনিয়ন, বদরপুর ও মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ৬২টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের মধ্যে রয়েছে সদর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, জাউনিয়ার চর লম্বাপাড়া, বড়াইডাঙ্গী পাড়া, পশ্চিম রাজীবপুর, মদনের চর, করাতিপাড়া, সবুজবাগ, মেম্বার পাড়া ও টাঙ্গালিয়া পাড়া। কোদালকাটি ইউনিয়নের উত্তর কোদালকাটি, আনন্দবাজার, শংকর মাধবপুর, বিলপাড়া ও সাজাই সরকার পাড়া। বদরপুর ও মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ভেলামারী, কির্ত্তনটারী, বড়বের চর ও কাদেরের চর। এসব এলাকায় এক হাজার ৫২৭ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন মিয়া।
যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, তাঁর ইউনিয়নের ২০ গ্রামের ৫ হাজার পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি ৬০০ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে জিআরের চাল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রৌমারী সদর ইউনিয়নের কলাবাড়ি এলাকার বাবুল মিয়া নামে এক ভ্যান চালক বলেন, তাঁর বাড়ির চারপাশে বুক পানি। এ কারণে বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বের করতে পারছেন না। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তিনি।
চরশৌলমারী ইউনিয়নের সুখেরবাতি এলাকার কৃষক আমির হোসেন বলেন, অনেক কষ্টে চার বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছে। কিন্তু বন্যার পানিতে সব ডুবে গেছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
রাজীবপুরের ভেলামারী চরের করিমন বেগম বলেন, চারপাশেই বন্যার পানি। বসতঘর তলিয়ে যাওয়ায় তিনি রান্না করতে পারছেন না। চিড়া-মুড়ি খেয়ে কোনো মতে দিন যাচ্ছে পরিবারের সদস্যদের। কোথায় যাবেন, কী করবেন বুঝতে পারছেন না।
একই এলাকার কৃষক ফজল মিয়া বলেন, বন্যায় সবকিছু তলিয়ে যাওয়ায় গবাদী পশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তিনি।
রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামসুদ্দিন বলেন, এ উপজেলায় ১৮ মেট্রিক টন জিআরের চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৭০ গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দুর্গত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন, বন্যায় এ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৬২ গ্রামের ৪ হাজার পরিবারের ১৬ হাজার ৬০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ পর্যন্ত ২৭ মেট্রিক টন জিআরের চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুর্গতদের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে ২১ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।