বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল
গাইবান্ধায় ১৩৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, বেশি ঝুঁকিতে শিশু ও বৃদ্ধরা

গাইবান্ধায় বন্যার প্রভাবে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দী জীবনযাপন করছে। ছবি: সমকাল
গাইবান্ধা সংবাদদাতা
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪ | ১৮:০৭
গাইবান্ধায় বন্যার প্রভাবে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দী জীবনযাপন করছে। বন্যা কবলিত এলাকায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষা ছাড়াও পশু-পাখি রাখার স্থান ও গো-খাদ্যসহ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার প্রভাবে এ পর্যন্ত জেলার ১৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের মাঝে জরুরি নিরাপত্তা, শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য, ভিটামিন ট্যাবলেট, পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ও নিরাপদ পানি বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে প্রশাসন ও দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ডব্লিউএফপির (ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম) অর্থায়নে ২০ হাজার পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, রোববার (৭ জুলাই) দুপুর ১২টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ১৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। তবে আবারও বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে।
গাইবান্ধার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী এসব এলাকার মানুষ শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। প্রকট আকার ধারণ করেছে গো-খাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
জেলা প্রশাসনের দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধার সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জের ৯টি, সাঘাটার ৮টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা বেগম ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, বন্যার কারণে মাদ্রাসাসহ ২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার একটি পরীক্ষাকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে, জেলায় এ পর্যন্ত ১১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ১৭টি স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘বন্যায় চার উপজেলায় ২ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট ও ভুট্টার বীজতলাসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি পানিতে ডুবে গেছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। অন্যথায় ফসল পচে নষ্ট হয়ে যাবে।’
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, ‘এ পর্যন্ত সদর উপজেলাসহ চার উপজেলার বন্যার্ত মানুষের মাঝে ৩ হাজার ৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৬৫ টন জিআর চাল এবং ১০ লাখ টাকা নগদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরও ২৬৫ টন চাল মজুদ রয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পিড বোট প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা এবং উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ইউনিয়ন-ভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।’
- বিষয় :
- গাইবান্ধা
- বন্যা
- স্কুল বন্ধ