ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বিচার চাই না, সংসার বাঁচাতে ছেলের চাকরি চাই

গুলিতে নিহত আব্দুল গনির স্ত্রীর আকুতি

বিচার চাই না, সংসার বাঁচাতে ছেলের চাকরি চাই

আব্দুল গনি

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪ | ২৩:৪৫ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৪ | ১৩:৩৭

স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছিল আব্দুল গনির সুখের সংসার। হঠাৎই যেন সব তছনছ হয়ে গেল। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকায় গুলিতে নিহত হন গনি। গনির স্ত্রী লাকী আক্তারের কণ্ঠে ঝরে পড়ছিল আকুতি– ‘স্বামী হত্যার বিচার কার কাছে চাইব? আমি বিচার চাই না। শুধু সংসার বাঁচাতে ছেলের একটা চাকরি চাই।’

নিহত গনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মজিদ শেখের ছেলে। ঢাকার গুলশান-২ এলাকার আবাসিক হোটেল সিক্সসিজনে কাজ করতেন তিনি। গত ১৯ জুলাই বাড্ডার ভাড়া বাসা থেকে হোটেলে যাওয়ার সময় গুলিতে নিহত হন তিনি। গত শুক্রবার বিকেলে তাঁর গ্রামের বাড়ি রহিমপুরে মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়। 

১৫ বছর ধরে আবাসিক হোটেল সিক্সসিজনে চাকরি করতেন তিনি। থাকতেন বাড্ডায় একটি ভাড়া বাসায়। তাঁর ছেলে আলামিন এসএসসি পাস করার পর ঢাকায় চলে যান। সেখানে তিনি শেফের কাজ শিখতেন। সম্প্রতি রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের চরখানাখানাপুর এলাকায় বাড়ি করেন গনি। সেখানেই স্ত্রী লাকী চার বছরের মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে থাকেন। মাঝেমধ্যে গনি বাড়ি আসতেন। তিনি যা আয় করতেন তাতে সংসারে টানাপোড়েন থাকলেও সুখের কমতি ছিল না। ১৯ জুলাই রাজধানীর গুলশান এলাকায় সংঘর্ষের মাঝে পড়ে মাথায় গুলি লেগে মারা যান গনি। ২১ জুলাই রাতে তাঁকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। 

গনির বাবা মজিদ শেখ জানান, গত ১৯ জুলাই সকালে তাঁর ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একজন তাঁকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন তাঁর ছেলে কি ঢাকায় থাকেন কিনা। তিনি হ্যাঁ সূচক জবাব দিলে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয় তাঁর ছেলের শরীরে গুলি লেগেছে। হাসপাতালে আছেন। ঢাকায় কেউ থাকলে পাঠিয়ে দিতে বলেন তিনি। এ সময় কান্নারত কণ্ঠে মজিদ জানান, তাঁর আরেক ছেলে ঢাকায় থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ফোন করে হাসপাতালে যেতে বলেন। তাঁর ছোট ছেলে হাসপাতালে যাওয়ার পরই জানতে পারেন গনি আর নেই। ছেলে হারানোর কষ্ট বুকে চেপে আছেন। চার বছর বয়সে তাঁর নাতনি এতিম হয়ে গেল। তার করুণ মুখের দিকে তাকাতে পারেন না তিনি। 

লাকী আক্তার বলেন, তাঁর স্বামী খুব সহজ সরল ছিলেন। তিনি কোনো রাজনীতিও করতেন না। ছেলে-মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে সুখে ছিলেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুতে তাঁর সুখের সংসার শেষ হয়ে গেল। সংসার চালাতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণী হয়েছেন। এসব টাকা শোধ করবেন কীভাবে? একে তো স্বামীর মৃত্যুশোক আরেক দিকে সংসার আর ঋণের চাপে চোখে অন্ধকার দেখছেন। সংসারে হাল ধরার কেউ নেই। তিনি স্বামী হত্যার বিচার চান না। সংসার যাতে চালাতে পারেন এজন্য ছেলের একটা চাকরি চান।

গনির ছেলে আলামিন শেখ জানান, এসএসসি পাসের পর তাঁর বাবা তাঁকে ঢাকা নিয়ে যান। সেখানে শেফের কাজ শিখছেন তিনি। বাবার সঙ্গে একই বাসাতে থাকতেন। আগের রাতে কাজ শেষ করে সকালে এসে ঘুমিয়েছিলেন বাসায়। সকাল ১০টার দিকে মা ফোন দিয়ে বলেন, ‘তোর বাবার খবর নে। মাথায় গুলি লেগেছে।’ পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তাঁর বাবার মরদেহ দেখতে পান আলামিন। 

ম্রিয়মাণ কণ্ঠে আলামিন বলেন, ‘আমি ঢাকায় শেফের কাজ শিখছিলাম। এখনও বেকার। বাড়িতে মা আর ছোট বোন। বাবাকে হারিয়ে আমরা এখন বড় অসহায় হয়ে পড়েছি।’

আরও পড়ুন

×