হাকালুকি হাওরে ফের জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে ৫ লক্ষাধিক মানুষ

ফাইল ছবি
মামুনুর রশীদ, ফেঞ্চুগঞ্জ (সিলেট)
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪ | ১৮:৩৪
সাম্প্রতিক টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি হাওরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে গত এক মাস ধরে ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানবাজার, কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১০ সালে হাকালুকি হাওরে দীর্ঘ আট মাস স্থায়ী জলাবদ্ধতায় বোরো ধানসহ বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ছয় উপজেলায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। এই এলাকার বাসিন্দাদের আন্দোলন সংগ্রামের হাকালুকি হাওরকে বন্যামুক্ত রাখতে জুড়ি নদীর মোহনা থেকে পলি সরাতে পৌনে দুই কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় পাউবো। তবে ঠিকাদার ও পাউবো কর্মকর্তাদের অনিয়মে সুষ্টুভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। দু’বছর যেতে না যেতেই আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এনিয়ে হাওর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ২০১৮ সালে পাউবোর নিজস্ব তত্বাবধানে কুশিয়ারা নদী সংলগ্ন জুড়ি নদীর মূল মোহনা থেকে ১০ কিলোমিটার ও গোলাপগঞ্জের কালিকৃষ্ণপুরে সোনাই নদী আট কিলোমিটার খননের প্রকল্প হাতে নেয় পাউবো। ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে জুড়ি ও সোনাই নদীর তলদেশ ৩২ ফুট গভীর ও ১৫০ ফুট প্রস্থ করে খনন করা হয়। এতে ওই নদী দুটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েক বছর প্রকল্পের সুফল পান হাকালুকি হাওর পাড়ের বাসিন্দারা।
সম্প্রতি নদী মুখে পলি জমে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ জন্য জুড়ি নদীর মোহনায় স্থাপিত বুড়িকিয়ারী প্রতিরক্ষা বাঁধকে (ক্রস ড্যাম) দায়ী করে তারা ওই বাঁধ অপসারনের দাবি করে আসছেন কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলার বাসিন্দারা।
হাকালুকি হাওর তীরের বাসিন্দা ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আপ্তাব আলী জানান, হাকালুকিতে পানি আসে সীমান্তের ওপার (ভারত) থেকে জুড়ি, কন্টিয়ালা ও কুইয়াছড়ি নদী দিয়ে। আর ওই পানি বের হয়ে যায় কুশিয়ারা নদী দিয়ে। এক সময় হাকালুকির ভেতর সতেরোটি ছোট নদী প্রবাহিত হতো। সুষ্টু হাওর ব্যবস্থাপনার অভাবে ওই নদীগুলোর অস্তিত্ব আর নেই। অবৈধভাবে ভরাট হওয়ায় তিন শতাধিক বিল নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওরে এখন বিলের সংখ্যা ২৩৮টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে হাওরের বিয়ানীবাজার অংশটি এখন অনেকখানি ভরাট হয়ে গেছে। হাকালুকি হাওরকে বাঁচাতে সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন দাশ বলেন, হাকালুকি হাওরের পানি ওঠা-নামা করে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধির ওপর। কুশিয়ারা নদীর পানি কমলে হাকালুকির পানিও কমে যাবে।
বাংলাদেশ নদী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান আলতামাস হোসেন জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিলেটে বৃষ্টিপাতের ধরন আগের চেয়ে পাল্টে গেছে। এখন মাত্র তিনদিনে এক মাসের বৃষ্টি হচ্ছে। যেগুলোর ধারণ ক্ষমতা নদী-হাওরের নেই। এছাড়া হাওরের অনেক নদী-নালা ও খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত পানি ধারণ ক্ষমতাও কমে গেছে।
- বিষয় :
- জলাবদ্ধতা
- হাকালুকি হাওর
- সিলেট
- মৌলভীবাজার