কোটা সংস্কার আন্দোলন
তিন মিনিটের জন্য বেরিয়ে লাশ হয়ে ফেরে ইমরান

নিহত কিশোর ইমরান মিয়া। ছবি: সমকাল
নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪ | ১৬:৫৬ | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪ | ১৭:১৯
১৭ বছরের কিশোর ইমরান মিয়া। কোরআনের হাফেজ ও মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। পড়াশোনার সুবাদে থাকতো ঢাকায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় বাবা-মাকে দেখতে ছুটে যায় গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। সেখানে দেখতে পায় শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন। বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে তিন মিনিটের জন্য বেরিয়ে বাসার পাশে এসে দাঁড়ায় ইমরান। মুহূর্তেই একটি গুলি এসে লাগে তার বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। পরেরদিন বাড়িতে লাশ আসে।
ইমরানের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার রামপুর গ্রামে। তার বাবার ছোয়াব মিয়ার ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী। চার ভাইবোনের মধ্যে ইমরান সবার ছোট। পার্শ্ববর্তী লাখাই উপজেলার মোড়াকুড়ি ইউনিয়নের জিরুন্ডা মানপুর তোফালিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে সে। পরে ঢাকার একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। ইমরানের বাবা ছোয়াব মিয়া নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাহেবপাড়ায় বসবাস করতেন।
গত রোববার ইমরানের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, দুই চালা একটি ভাঙা টিনের ঘর। দুটি কক্ষ। একটিতে তার দাদা-দাদি আর অন্য কক্ষে থাকতেন ইমরানের পরিবারের সদস্যরা। বাড়ির উঠোনে বসে বিলাপ করছেন দাদি নিহারা বেগম।
চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি সমকালকে বলেন, কিতা আর কমু! আমার বুকের ধন কাইরা নিছে। নারায়ণগঞ্জ যাওনের আগের দিন আমার গলায় ধইরা একটা চুমা দিয়ে কইছিন, দাদি আমি আবার কিছু দিন পর বাড়িত আইয়া পরুম। তুমি চিন্তা কইরো না। আমার নাতি বাড়িত আইছে ঠিকই। কিন্তু লাশ হইয়া আইছে। এই বিচার আল্লাহ করব।
ইমরানের বাবা ছোয়াব মিয়া সমকালকে বলেন, আমার পুলা হের মায়ের কুলে ঘুমাই আছিন। ইকটু পরে কয় আম্মা আমার খুব তাইস করতাছে। তিন মিনিট সময় দিবানি একটু দোকানে যামু। একটা মজু খাইয়া আবার আইসা পড়ুম। কিন্তু এই যাওয়া যে শেষ যাওয়া হইব কেডা জানতো। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমার কোরআনের হাফেজ ছেলেকে যারা হত্যা করছে এর বিচার আল্লার কাছে দিলাম।
এদিকে কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে নাসিরনগর উপজেলার ৯ জনের মতো গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। এর মধ্যে সমকালের অনুসন্ধানে পাঁচজনের নাম পরিচয় জানা গেছে। তাদের পরিবারের দাবি, যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তাদের অধিকাংশই কিশোর। যাদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। তারা ঢাকার মিরপুরের একটি হোটেলের কর্মচারী।
নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর আলম সমকালকে বলেন, থানা পুলিশ কোন নিরপরাধ লোককে হয়রানি করছে না। ছাত্র নয়, এমন যারা হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত প্রমাণ থাকা সাপেক্ষে আটক করা হচ্ছে।