কাপ্তাই বাঁধ খুলে দেওয়া হবে রাত ১০টায়, সতর্কতা জারি

ছবি: ফাইল
রাঙামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪ | ১৭:১৯ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪ | ১৮:৩১
টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমায় পৌঁছেছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ রাত ১০টায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট (স্পিওয়েল) খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কাপ্তাই হ্রদে উজান ও ভাটি অঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য শনিবার রাত ১০টা থেকে বাঁধের সব জলকপাট খুলে দিয়ে ছয় ইঞ্চি পরিমাণ পানি ছেড়ে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দেওয়া হয়। এ বাঁধের ফলে ২৫৬ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিশাল জলধারা সৃষ্টি হয়। মানবসৃষ্ট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ হ্রদের কারণে রাঙামাটি জেলায় ৫৪ হাজার কৃষি জমি পানিতে ডুবে যায়। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের চাষযোগ্য জমির প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ ধান চাষের জন্য ওই জমিগুলো অন্যতম ছিল। এছাড়া বাঁধের কারণে সম্পত্তি ও ঘরবাড়ি ক্ষতি ছাড়াও এক লাখের বেশি মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়।
জানা গেছে, সপ্তাহব্যাপী টানা বৃষ্টিপাতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ছিল ১০৭ দশমিক ৬৭ ফুট মেইন সি লেভেল (এমএসএল)।
বর্তমানে পাঁচটি ইউনিট থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৩২ হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে স্বাভাবিক মৌসুমে পানির উচ্চতা থাকার কথা ছিল ৯৭ ফুট এমএসএল। এ বাঁধে ১০৯ ফুট এমএসএল পানির ধারণক্ষমতা রয়েছে।
এদিকে আজ কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের স্বাক্ষরিত এক জরুরি বার্তায় জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানি উচ্চতা ছিল বিকেল ৩টায় ১০৭ দশমিক ৬৭ ফুট এমএসএল হয়। বিপৎসীমার কাছাকাছি পানি উঠায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের আজ রাত ১০টা থেকে বাঁধের ১৬টি জলকপাট খুলে দিয়ে ছয় ইঞ্চি পরিমাণের পানি ছেড়ে দেওয়া হবে। এতে বাঁধের নয় হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হবে।
তবে হ্রদের পানির প্রবাহ বা লেভেল ও বৃষ্টিপাতের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রবাহ বা লেভেল অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে জলকপাটের গেট খোলার পরিমাণ বাড়ানো হবে বলে জরুরি বার্তায় জানানো হয়।
এদিকে বাঘাইছড়ি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে লোকজন এখনও নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। জলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার চার উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভায় দুই হাজার ৬৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়েছেন। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৩২০ জন মানুষ। এছাড়া জেলার ১৭৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আটশত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫শ’ মেট্রিক টন চাল ও দশ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার জানান, বন্যার পানি অনেক কমে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণসহায়তা অব্যাহত রয়েছে।