ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সংস্কারে প্রয়োজন ৩১০ কোটি ৫ লাখ টাকা, বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩৫ কোটি টাকা

বরগুনায় খানাখন্দে ভরা ৪৭৭ কিলোমিটার সড়ক

বরগুনায় খানাখন্দে ভরা ৪৭৭ কিলোমিটার সড়ক

বেহাল বরগুনা সদর উপজেলার লাকুরতলা-ফুলঝুড়ি সড়ক

বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪ | ২০:৩১

বরগুনার ছয় উপজেলায় ৪৭৭ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশে চলাচলে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। সড়কগুলোর বেশির ভাগজুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মাঝারি ও ছোট গর্তও অগণিত। দুর্ভোগ কমাতে খানাখন্দে ভরা সড়কের কোথাও কোথাও জরুরি ভিত্তিতে মাঝেমধ্যে সংস্কার হলেও তা কোনো কাজেই লাগেনি।

ভাঙা সড়কে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে মানুষ ও যান চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। পণ্য পরিবহন দূরের কথা, মানুষ চলাচলেরই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কগুলো। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগী এবং স্কুলগামী শিশুদের। দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত সড়ক মেরামতের দাবি জানায়েছেন স্থানীয়রা। আর এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, বরাদ্দ সংকটে মেরামত হচ্ছে না ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কাদের বলেন, প্রতিবছরই সড়ক মেরামত হচ্ছে। কিন্তু বরাদ্দ কম থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক কমছে না। সমবণ্টনের পাশাপাশি উপকূলীয় জেলা হিসেবে সড়ক মেরামতে বেশি বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বরগুনা জেলার ৬ উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ৬ হাজার ৩৪৩ কিলোমিটার কাঁচাপাকা সড়ক রয়েছে। যার মধ্যে ১ হাজার ৪৩০ কিলোমিটার কার্পেটিং, ৫০৮ কিলোমিটার আধাপাকা এবং ৪ হাজার ৪০৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। ১ হাজার ৪৩০ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়কের মধ্যে উপজেলা সড়ক ৪০১ কিলোমিটার, ইউনিয়ন সড়ক ৪২২ কিলোমিটার ও গ্রাম সড়ক ৬০৭ কিলেমিটার।

এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিবছরই পাকা সড়কের একটি অংশ মেরামতের প্রয়োজন হয়। সেই অনুযায়ী ১ হাজার ৪৩০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪৭৭ কিলোমিটার মেরামত করতে হবে। প্রতি কিলোমিটার মেরামতে ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। সেই অনুযায়ী ৪৭৭ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করতে ব্যয় হবে ৩১০ কোটি ৫ লাখ টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে জেলায় সড়ক মেরামতের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। সেখান থেকে এলসিএস মহিলাকর্মী, এমএমটি ও কেরিড ওভার বাবদ বাদ যাবে ১০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সর্বসাকল্যে সড়ক মেরামতে ব্যয় করা যাবে মাত্র ২৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা প্রয়োজনের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৯ ভাগ। এ টাকায় মাত্র ৩৮ কিলোমিটার মেরামত করা সম্ভব হবে। এই হিসাব এলজিইডি কর্তৃপক্ষের। বাস্তবে এর চেয়েও বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক রয়েছে বরগুনা জেলায়– এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা।

সদর উপজেলার লাকুরতলা-ফুলঝুড়ি ভায়া বাওয়ালকর ১৬ কিলোমিটার সড়ক দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। পাঁচ বছর ধরেই সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর ৩ কিলোমিটারজুড়ে মেরামত হলেও বাকি অংশের হাল খুবই খারাপ। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।

চলাচলের অনুপযোগী এ উপজেলার বরগুনা-চালিতাতলী, বরগুনা-নিশানবাড়িয়া, বরগুনা-কালিরতবক, পরীরখাল-রাখাইনপাড়া, ডৌয়াতলা-আয়লাবাজার, বৈকালিন বাজার-আয়লা সড়কও।

ফুলতলা এলাকার আবদুল হক বলেন, ‘বছরের পর বছর ভাঙা রাস্তায় হাঁটি; কিন্তু দেখার কেউ নেই। এমপি-চেয়ারম্যান পরিবর্তন হয়, মোগো ভাঙা রাস্তার পরিবর্তন হয় না। প্রত্যেক বছর সবাই আয়, আর রাস্তা মাইপ্পা যায়, কেউ রাস্তা ভালো কইরা দেয় না।’
খাজুরতলা এলাকার অটোচালক নিজাম বলেন, ‘লাকুরতলা-ফুলঝুড়ি রাস্তা দিয়া অটো নিয়া যাইতে গিয়া প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। অনেকের হাত-পাও ভাইঙা হাসপাতালে যাওয়া লাগছে। প্রায়ই রিকশা ভেঙে যায়।’

একই অবস্থা আমতলী উপজেলার মানিকঝুড়ি-কচুপাত্রা, ঘোপখালী-সোমবাড়িয়া বাজার। তালতলী উপজেলার ছোটবগী-তালতলী, পঁচাকোড়ালীয়া-চান্দখালী, তালতলী-সোনাকাটা, ছোটবগী-কড়ইবাড়িয়া। বামনা উপজেলার রামনা-খোলপটুয়াসহ একাধিক সড়কে। খানাখন্দ ভরা এসব সড়ক চলাচল অনুপযোগী।
তালতলীর চান্দখালী গ্রামের বেলাল হোসেন মিলন বলেন, সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল দূরের কথা মানুষ হাঁটতেই কষ্ট হয়। সড়ক মেরামতের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা।

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান খান বলেন, আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৮০ কোটি টাকার স্কিম তৈরি করে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়ক মেরামত করা হবে। অন্যথায় যা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, সেই টাকা দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়ক মেরামতের কাজ করা হবে।


 

আরও পড়ুন

×