আমতলী
টানা বৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট, আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কা

মাসব্যাপী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে আমনের বীজতলা। ছবিটি আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের চিরা গ্রাম থেকে তোলা
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪ | ২০:৩৭
আমতলী উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। এক মাস ধরে চলা বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বীজতলার চারা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে চলতি মৌসুমের আমন আবাদ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় রাত কাটাছেন কৃষক।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে আমনের বীজতলা করা হয়। উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় চলতি বছরে ১ হাজার ৮৯৯ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা করা হয়েছে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩২৫ হেক্টরে। ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৭৫ টন। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাসব্যাপী টানা বর্ষণ। ২৬ জুলাই থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে আমনের বীজতলা ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। মাসাধিককাল ধরে বীজতলা পানির নিচে থাকায় বেশির ভাগ ক্ষেতের বীজতলা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারি হিসাবে, ৪৭৫ হেক্টরের বীজতলা নষ্ট হলেও বাস্তবে ১ হাজার হাজার হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে।
কৃষকরা জানান, আমন ধান রোপণের এখন ভরা মৌসুম। মৌসুমের শুরু থেকেই টানা বৃষ্টি চলছে। পানিতে ডুবে পচে গেছে আমনের অর্ধেকের বেশি বীজতলা। এ মুহূর্তে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। বৃষ্টি এখনও থামেনি। পানি নামছে না। এ অবস্থায় নতুন করে বীজতলা তৈরি করাও সম্ভব নয়। ফলে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।
শনি ও রোববার সকালে উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া, কালীপুরা, কৃষ্ণনগর, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী, গাজীপুর, হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া, উত্তর তক্তাবুনিয়া, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া, গুরুদল, আমতলী সদর ইউনিয়নের ছোটনীলগঞ্জ, চলাভাঙ্গা, চাওড়া ইউনিয়নের বেতমোর বৈঠাকাটা, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ঘোপখালী, পশুরবুনিয়া ও বালিয়াতলী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এখনও শত শত হেক্টর আমনের বীজতলা প্রায় ৩-৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। প্রায় মাসাধিককাল ধরে বীজতলা তলিয়ে থাকায় পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
আমতলী সদর ইউনিয়নের নাচনাপাড়া গ্রামের কৃষক কামাল মোল্লা বলেন, ‘৫০ শতক জমিতে বীজতলা করি। বৃষ্টিতে সব তলাইয়া যায়। এহনো দেড় দুই আত পানি জইম্যা আছে। সব বীজতলা পইচ্যা নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এহন বীজ পামু কই। কী দিয়া ধান লাগামু হেই চিন্তায় আছি।’ একই গ্রামের ছোবাহান কাজীর ৪০ শতাংশ জমির বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।
হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া গ্রামের ফজলু প্যাদা বলেন, ‘মুই ৩০ শতাংশ জমিতে বীজতলা হালাইছি। বইন্যার পানি জইম্যা হেইয়াসব পইচ্যা নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এহন কুম্মে বীজ ধান পামু।’
চাওড়া ইউনিয়নের বৈঠাকাটা গ্রামের মাসুম গাজী, জসিম খান, ঘটখালী গ্রামের লিটন, আমতলী সদর ইউনিয়নের আলতাফ হাওলাদার, ঘোপখালী গ্রামের হোচেন বয়াতি বলেন, ‘ব্যামালা টাহা খরচ কইর্যান আমনের বীজ চাষ হরছি। দেওয়ইতে সব নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এহন মোরা আমন ধান আর লাগাইতে পারমু না। ধান লাগাইতে না পারলে গুরাগারা লইয়া সামনের দিনে কী খামু হেই চিন্তায় আছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইছা বলেন, এ বছর টানা বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ৪৭৫ হেক্টর আমনের বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। এতে আমনের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।