ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মহাসড়ক দখল করে পার্ক 

উচ্ছেদ নিয়ে বিসিসি সওজের ঠেলাঠেলি

উচ্ছেদ নিয়ে বিসিসি সওজের ঠেলাঠেলি

ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল ব্যুরো

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪ | ২১:০৯

ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের ১১ কিলোমিটার পড়েছে বরিশাল নগরে। এর মধ্যে মূল শহরের অংশটি ‘সিঅ্যান্ডবি রোড’ নামে পরিচিত। ২০২২ সালে এই সড়কের একটি বাইলেন দখল করে পার্ক নির্মাণ করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) তৎকালীন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। ব্যস্ততম মহাসড়কের পাশে পার্ক নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে সেই সময় অনেক সমালোচনা হয়। কিন্তু সাদিকের ভয়ে কেউ এটি সরানোর কথা বলতে পারেননি। বর্তমানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পার্কটি উচ্ছেদ করা নিয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) এবং বিসিসির ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে। সওজ বলছে, যারা নির্মাণ করেছে তারাই উচ্ছেদ করবে। অন্যদিকে বিসিসি বলছে, উচ্ছেদ করতে হবে জমির মালিকদের।

সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তাঁর প্রয়াত মায়ের নামানুসারে পার্কটির নামকরণ করেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম পার্ক’। পার্কের নির্মাণ ব্যয় দেখানো হয় ১৪ কোটি টাকা। 

জানা গেছে, ঠিকাদার ছিলেন সাদিকের অনুসারী ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না। পার্কের পশ্চিমপাশে তাঁর শ্বশুরবাড়ি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি নিয়ে তাদের বিরোধ রয়েছে। শ্বশুরবাড়ির প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পার্ক নির্মাণের মূল পরামর্শক ছিলেন মান্না। প্রতিপক্ষদের ২৫টি দোকানঘর উচ্ছেদের পর জমি দখল করে পার্কসংলগ্ন সড়কের সঙ্গে একীভূত করা হয়। 

সিঅ্যান্ডবি রোডের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজসংলগ্ন পশ্চিমপাশের বাইলেনে পার্ক নির্মাণের প্রস্তাবনা উঠলে সে সময় সমালোচনা শুরু হয়। জানা গেছে, শুরুতেই সওজ আপত্তি করায় পার্ক নির্মাণের কাজ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চিঠি দিয়ে নির্মাণের অনুমতি দেন। ফলে সওজের স্থানীয় কর্মকর্তারা পিছু হটেন। 

সে সময় পার্কসংলগ্ন কয়েকজনের জমি দখলেরও অভিযোগ ওঠে। তবে এসব নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস করেননি। কারণ তখনকার মেয়র বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য সাদিক আবদুল্লাহ ছিলেন নগরে দোর্দণ্ড প্রভাবশালী। তাঁর বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই। এর পরের মেয়র হাসানাতের ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহ গত বছর নভেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের পর পার্কটি অবৈধ ও জনদুর্ভোগের কারণ স্বীকার করেন। তবে এটি উচ্ছেদে কোনো পদক্ষেপ নেননি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা পার্কের সব খেলনা ভেঙে ফেলে। এখন শুধু স্থাপনা দাঁড়িয়ে আছে। 

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল মহানগর সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, পার্ক নির্মাণের ফলে মহাসড়কের ওই অংশটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মহাসড়কের মধ্যে পার্ক নির্মাণের উদ্যোক্তা তখনকার মেয়র ও সহযোগীরা আসলে মানসিক বিকারগ্রস্ত। এখন এটি উচ্ছেদ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। 

মহাসড়ক নিরাপদ করতে পার্ক উচ্ছেদ করা হবে কিনা– জানতে চাইলে বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন বলেন, এটি নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্তও তাদের নিতে হবে। 

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরায়েল হোসেন বলেন, বিসিসির প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার। তিনি সিদ্ধান্ত দিলে বিসিসি বাস্তবায়ন করবে। 

প্রশাসক শওকত আলী বলেন, পার্কটি নির্মাণ হয়েছে মহাসড়কের ওপর। ওই জমির মালিক সওজ। প্রয়োজন মনে করলে সওজ পার্কটি উচ্ছেদ করতে পারে। এ অধিকার তাদের রয়েছে। দাপ্তরিক চিঠি দিয়ে সহযোগিতা চাইলে বিসিসি সহযোগিতা করবে।
 

আরও পড়ুন

×