ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ফরিদপুর

পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

বিক্রি করার জন্য ভ্যান থেকে পাট নামাচ্ছেন কৃষক। ছবি: সমকাল

ফরিদপুর অফিস

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:০৬

পাটের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরে এ বছর পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। রপ্তানিযোগ্য এ পণ্যটির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। বাধ্য হয়ে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পাট বিক্রি করছেন। আর গুনছে লোকসান। এদিকে ভরা মৌসুমেও বাজারে তেমন পাট নেই। 

ফরিদপুরে পাটের বাজার হিসেবে পরিচিত কানাইপুরে হাটের দিন মঙ্গলবার সকালে পাট বেচাকেনায় ছিল মন্দাভাব। অথচ এ বাজার মৌসুমের সময় থাকতো রমরমা।

সকালে বাজারটিতে দেখা যায়, নিজেদের কষ্টার্জিত এই কৃষি পণ্যটি বিক্রি করতে কেউ ভ্যানে করে, আবার কেউ মাথায় করে বাজারে এনেছেন। তবে তাদের সংখ্যা কম। এ অঞ্চলে পাটের মান ভালো হওয়ার পরও ন্যায্যমূল্য না পাওয়া হতাশ চাষিরা। বিভিন্ন বাজার ও আড়তগুলোতে ভালো মানের এক মণ পাট ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বছর খরার কারণে পাট গাছ বড় ও মোটা হতে পারেনি। এতে পাটের আশ কম হওয়ায় ফলনও অনেক কম হয়েছে। এছাড়া বীজ, সার, তেল, ওষুধ ও মজুরির খরচ বাড়ায় এই দামে পাট বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।

বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা স্থানীয় কৃষক সোবাহান মোল্লা ও কুবাত শেখ জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও লোকসানের শঙ্কা নিয়েই নিজেদের সবটুকু জমিতে পাট বুনেছেন তারা। এবার পুরো বর্ষাকাল ছিল অনাবৃষ্টি। সে সময় ডিজেল পুড়িয়ে ক্ষেতে সেচ দিতে হয়েছে। এছাড়া পাট কাটার পর আশপাশের খাল-নালায় পানি না থাকায় জাগ দিতে ভ্যানে করে দূরে নিতে হয়েছে। পাট গাছের আঁটি ও জাগ দেওয়ার পর শ্রমিক দিয়ে আঁশ ছাড়ানো ও শুকনোর জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে, সেটা ধান বা মৌসুমের অন্য যেকোনো ফসলের জন্য করলে তারা অনেক লাভবান হতেন। আগামী বছর আর পাট চাষ করবেন না বলে জানিয়েছেন তারা।

জেলার অন্য চাষিদের মুখেও একই কথা। তারা জানান, বাজারে যে দরে পাট বিক্রি হচ্ছে, এতে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। উৎপাদন ভালো না হওয়ায় এবার চলমান এই দরে পোষাচ্ছে না।

কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী আনন্দ সাহা জানান, ভরা মৌসুমে বাজারে পাট অনেক কম। হাটের দিন যেখানে একজন ব্যবসায়ী পাঁচ থেকে সাত ট্রাক পাট ক্রয় করতেন, সেখানে দুই থেকে তিন ট্রাক পাওয়াই এখন মুশকিল। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রমতে, এ বছর জেলায় ৮৬ হাজার ৫শ’ ২৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ৬১ মেট্রিক টন।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, এ বছর ফরিদপুরে উৎপাদন কম হলেও পাটের গুণগতমান অন্য যেকোনো জেলার তুলনায় অনেক ভালো। মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষের উপযোগী হওয়ায় এ অঞ্চলে উন্নত মানের পাট উৎপাদন হয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে মণপ্রতি ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। যদিও উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বেড়েছে, তবুও পাট চাষে আগ্রহ আছে কৃষকদের। সরকার তাদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে আসছে, আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি।
 

আরও পড়ুন

×