ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থাকল গুলিতে নিহত রিতার

রিকশাচালক বাবা ও গৃহকর্মী মায়ের কান্না যেন শেষ হচ্ছে না

রিতা আক্তার

শাহারুল আলম, জয়পুরহাট

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০৯:১০ | আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১০:১৬

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার মিরপুর-২ এলাকায় ওভারব্রিজের নিচে পুলিশের গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কলেজছাত্রী রিতা আক্তার। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের তালখুর গ্রামের এই মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে চিকিৎসক হবেন। মেয়ের স্বপ্ন পূরণে বাবা আশরাফ আলী ঢাকায় এসে রিকশা চালাতেন, মা রেহানা বিবি বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করে মেটাতেন ঢাকায় মেয়ের পড়াশোনার বিপুল খরচ। তাদের সব পরিশ্রম, সব আশা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে রিতার মৃত্যুতে। মেয়েকে হারানোর পর দুই মাসের কাছাকাছি সময় কেটে গেলেও তাই দুর্ভাগা এই মা-বাবার কান্না যেন এখনও শেষ হচ্ছে না। আশরাফ আলী ও তাঁর স্ত্রী রেহানা যেন সব কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। কাঁদতে কাঁদতে তারা এখনও বলছেন, স্বপ্ন পূরণ দূরের কথা, রিতা লাশ হয়ে ফিরে এসেছে গ্রামের বাড়িতে। এখন আর কী হবে কাজ করে।

মিরপুরের দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন রিতা। গত বছর এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রিতা জয়পুরহাট থেকে এসেছিল ঢাকায়। মেয়ের লেখাপড়ার কথা ভেবে কয়েক মাস আগে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে আসেন আশরাফ আলী ও রেহানা বিবি। ঢাকার মিরপুর-২ এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন তারা। আশরাফ আলী রিকশা চালাতেন, রেহানা কাজ করতেন বাসাবাড়িতে। রিতার বড় ভাই রাকিব ইসলাম কাজ করেন ট্রাকচালকের সহকারী হিসেবে। ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু রিতার মৃত্যু এলোমেলো করে দিয়েছে পরিবারটিকে।

২৭ সেপ্টেম্বর কালাইয়ের আনি ফকির-পুনট সড়কের পাশে তালখুর গ্রামে রিতাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের বেড়া দেওয়া দুটি ঘর। একটি ঘরে রিতার বইগুলো সেলফে সাজানো। পাশেই রয়েছে বিভিন্ন সময়ে তাঁর পাওয়া পুরস্কারগুলো। কথার ফাঁকে বারবার রিতার পোশাক ও বই নিয়ে মা রেহানা বিবি কাঁদছিলেন। বাবা আশরাফ আলী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন বোবার মতো। মেয়েকে হারিয়ে ঢাকায় থাকার উৎসাহ হারিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সকালে রিতা এক বান্ধবীর ফোন পেয়ে ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলিতে রিতা নিহত হলেও সঙ্গে সঙ্গে সে খবর পাননি বাবা-মা। মেয়েকে ঘরে ফিরতে না দেখে অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে রিতার মরদেহ শনাক্ত করেন বাবা-মা। হাসপাতাল থেকে রিতার মরদেহ গ্রহণের পর পরদিন লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। 

আশরাফ আলী বলেন, যার জন্য গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় গিয়েছিলাম, সেই যখন নেই, তাহলে ঢাকায় থাকব কেন? ঢাকা শহরকে আমি ঘৃণা করি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

রেহানা বিবি বলেন, মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে ঢাকায় গিয়ে বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেছি। তাতে আমার কষ্ট নেই; কিন্তু আমার মেয়েকে কেন গুলি করে হত্যা করা হলো সেটাই ভুলতে পারছি না। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের কী অপরাধ ছিল? ওরা বরং আমাকে গুলি করে মেরে ফেলত। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

আরও পড়ুন

×