পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ
হাজারো পরিবার পানিবন্দি, মেলেনি সরকারি সহায়তা, বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ

কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পেপে বাগান। বাঘা উপজেলার কালিদাশখালী গ্রাম
আব্দুল লতিফ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী)
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪ | ১৯:৫২
বন্যা আর টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে রাজশাহীর বাঘার পদ্মার চরাঞ্চলের গ্রামগুলো। নদীবেষ্টিত চকরাজাপুর ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি গ্রামসহ হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। সড়কগুলোর কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমরপানি জমেছে। পানি সামান্য কমলেও দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের।
অব্যাহত বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কালিদাশখালী, মানিকের চর, পলাশিফতেপুর, নীচ পলাশি, উদপুর, লক্ষ্মীনগর, দিয়াড়কাদিরপুর, চৌমাদিয়া, আতারপাড়াসহ ১০ গ্রামের হাজারো পরিবার পানিবন্দি। তলিয়ে গেছে আগাম চাষ করা সবজি ক্ষেত। চকরাজার ইউনিয়ন পরিষদ ও বাজারসহ কয়েকটি বিদ্যালয়ের চারদিকে পানি। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বেড়েছে সাপের উপদ্রব। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে পানিবন্দি ও ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ। ভাঙন থেকে ২৫ মিটার দূরে রয়েছে আতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভয়ংকর পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে বসবাসকারী বাসিন্দাদের।
সরেজমিন আতারপাড়া ও চৌমাদিয়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে পানি আর পানি। সবেচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে এ দুটি এলাকায়। আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন হাবু মোল্লা, আনজিরা বেওয়াসহ অর্ধশতাধিক মানুষ। যারা আছেন, তারা ডিঙি নৌকায় যাতায়াত করছেন। বেশ কিছু বাড়ির চুলা জ্বলছে না। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। সাপের উপদ্রব বেড়েছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। এসব স্থানে অনেকেই খেপলা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন।
ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পদ্মার পানি। এ কারণে বেশ কিছু রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এলাকার ২০০ বিঘা জমির বেগুন ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ঘরে পানি ওঠায় অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে রান্না করে আনছেন।
চৌমাদিয়া গ্রামের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল রহমান জানান, আতারপাড়াসহ তাঁর গ্রাম নদীসংলগ্ন হওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। এসব পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার কারণে এ এলাকার ৩০০ থেকে ৪০০ বিঘা জমির কালাই ও কলা বাগান নষ্ট হয়েছে। পানিবন্দি শত শত পরিবার। গৃহপালিত পশু, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছে তারা। ভাঙনে বাপ-দাদার বসতভিটা হারিয়েছেন অনেকে। এ অবস্থা বেশি দিন চললে লাশ দাফনের জায়গা পাওয়া যাবে না।
ভাঙন হুমকিতে থাকায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে আতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পানি আর পানি চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারদিকে। পানিবন্দি ও ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা শ্রেণি কক্ষে মালপত্র রেখেছে। এসব কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে– জানিয়েছেন এ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহেল রানা। একই অবস্থা পশাশিফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও। এ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, বছরের বেশির ভাগ সময় বন্যা আর ভাঙনের সঙ্গে লড়াই করেই চলছে পদ্মা নদীবেষ্টিত এলাকার মানুষ। এ কারণে অনেকেই ঘরহারা হয়েছে।
দিয়াড়কাদিরপুর গ্রামের সাবিরুল ইসলাম জানান, স্ত্রীসহ তিনজনের সংসার তাদের। বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। ছাগল ও গরু নিয়ে বিপদে পড়েছেন। এলাকায় কাজ নেই। সংসার চলছে মাছ ধরে বিক্রি করে। কোনো রকমে সংসার চালাতে হচ্ছে। অনেকের বাড়ি পদ্মায় চলে গেছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডিএম বাবুল মনোয়ার জানান, তাঁর ইউনিয়নটির অবস্থান বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে। সাড়ে ৩ হাজার পরিবারের মধ্যে অন্তত ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অন্তত দেড় শতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, আকস্মিক বন্যায় আর নিম্নচাপের কারণে নিচু এলাকায় আগাম চাষ করা সবজি ক্ষেত ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ক্ষেত ও পেঁপে বাগান নষ্ট হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, ভাঙন রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের তালিকার কাজ চলছে।
- বিষয় :
- বন্যার পানি
- দুর্ভোগ
- রাজশাহী
- বাঘা