ভাইরাল ফ্লুতে শিশুরা কাবু

.
শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:১৪
চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর মধ্যে ভাইরাল ফ্লুতে কাবু হচ্ছে শিশুরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, শরীরে ব্যথা, মুখে অরুচিসহ নানা রোগে তারা আক্রান্ত হচ্ছে। নগরীর সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ব্যক্তিগত চেম্বারে আসা শিশুদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত। অনেকের শরীরে পরে মিলছে ডেঙ্গুর অস্তিত্ব। এ অবস্থায় দিশেহারা অভিভাবকরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আক্রান্ত অনেক শিশুকে দেরিতে তাদের কাছে আনা হচ্ছে। আগেই অভিভাবকরা স্থানীয় ফার্মেসির ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। এতে শারীরিক জটিলতা বাড়ছে। ডেঙ্গু প্রকোপের এই সময়ে শিশুদের মধ্যে সামান্য অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে ৭৪ শয্যার বিপরীতে কয়েক দিন ধরে ভর্তি থাকছে তিন গুণের বেশি রোগী। একই অবস্থা জেনারেল হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত মা ও শিশু হাসপাতালে। চাপ বেড়েছে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বেসরকারি পার্কভিউ, মেট্রোপলিটন, ন্যাশনাল, সার্জিস্কোপ, শেভরন, ম্যাক্স, পপুলার, সিএসসিআর, ডেল্টা এবং একুশে হাসপাতালেও।
অভিভাবকরা বলছেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিশুর শরীর পুড়ে যাচ্ছে। ক্রমশ বাড়তে থাকা জ্বরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ও পেটব্যথা। অনেকের পুরো শরীরে ব্যথা। কারও কারও ডায়রিয়া এবং খাবারের প্রতি অনীহা দেখা দিচ্ছে।
চট্টগ্রামের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দীন সবুজ বলেন, ‘ডেঙ্গুর মধ্যে ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। প্রতিদিন হাসপাতাল ও চেম্বারে অনেক শিশু চিকিৎসা নিতে আসছে, অনেকের শরীরে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মিলছে ডেঙ্গু। আক্রান্তদের বড় অংশকে দেরিতে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হচ্ছে। এতে শিশুর শারীরিক জটিলতা বেড়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে কয়েক প্রকারের ওষুধ ও সিরাপ দেওয়া হচ্ছে। তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে জ্বর নিয়ন্ত্রণে না এলে দিচ্ছি অ্যান্টিবায়োটিক। অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।’
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘ডেঙ্গু ওয়ার্ডের পাশাপাশি শিশু বিভাগে ভাইরাল ফ্লু-জনিত নানা রোগ নিয়ে প্রতিদিন বাড়ছে রোগী। চাপ সামাল দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মা-বাবার অবহেলার কারণে অনেক শিশুকে সুস্থ করতে দীর্ঘ সময় লাগছে।’
চার দিন ধরে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছয় বছর বয়সী আকলিমার মা কানিজ বেগম বলেন, মেয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। একদিন রাতে হঠাৎ দেখি শরীর পুড়ে যাচ্ছে। খেতে চাইছে না। পরদিন দুপুর হতেই জ্বর ১০৪ ডিগ্রি পার। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করেছি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত ভয়ংকর হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুতে রেকর্ড হয়েছে। ৯০৭ জন আক্রান্ত ও মারা গেছে ১১ জন। সব মিলিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৬ জনের মৃত্যু ও আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৯০। আর
চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনে শনাক্ত হয়েছে ১৮৫ রোগী। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর মধ্যেই অনেক শিশু ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছে। অবহেলা না করে এই সময়ে জ্বর হলেই দ্রুত সন্তানকে চিকিৎসক দেখাতে হবে।
- বিষয় :
- অসুখ