একসঙ্গে বিদেশ গিয়ে পুড়ে মরলেন তারা

সালাম, জব্বার আলী, আবু তাহের
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৪৮
ভাগ্য ফেরাতে আট বছর আগে মালয়েশিয়া যান মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রমজানবেগ গ্রামের জব্বার আলী (৪২), আবু তাহের (৩২) ও সালাম (২৬)। তিনজন একই কোম্পানিতে কাজ করতেন; দূর পরবাসে ছিলেন একে অপরের পাশে। আর কয়েক বছর পর দেশে ফেরার কথা ভাবছিলেন তারা। প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন সেভাবে। কিন্তু তিনজন এখন লাশ হয়ে ফিরবেন।
গত ১০ অক্টোবর মালয়েশিয়ার জোহর রাজ্যের ইস্কান্দার পুতেরের গেলাং পাতার এসআইএলসি শিল্প এলাকায় একাধিক রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে জব্বার আলী, আবু তাহের ও সালাম দগ্ধ হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজন মারা যান। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় রমজানবেগ গ্রামে মাতম চলছে। কান্না থামছে না স্বজনদের। তারা দ্রুত মরদেহ ফেরত পেতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
জব্বার আলী রমজানবেগ গ্রামের রাজ্জাক ভূঁইয়ার ছেলে। আবু তাহেরের বাবার নাম আবুল কাশেম এবং সালাম ওরফে আকাশের বাবার নাম মো. মহিউদ্দিন। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছেন ইস্কান্দার পুতেরি জেলা পুলিশ প্রধান সহকারী কমিশনার এম কুমারাসন।
স্বজনরা জানান, ১০ অক্টোবর এসআইএলসি শিল্প এলাকায় একাধিক রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ সময় কারখানার ভেতরে থাকা তিন বাংলাদেশি শ্রমিকের শরীরের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়। খবর পেয়ে দমকলকর্মীরা পৌঁছানোর আগেই কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে তাদের মৃত্যু হয়।
বিবৃতিতে এম কুমারাসন জানিয়েছেন, স্থানীয় সুলতানাহ আমিনাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ অক্টোবর সন্ধ্যায় জব্বার আলী মারা যান। পরদিন ভোরে মৃত্যু হয় আবু তাহেরের। এর পরদিন ১৩ অক্টোবর রাতে সালামের মৃত্যু হয়। তাদের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।
গতকাল বিকেলে রমজানবেগ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সালামের মা তাসলিমা বেগম বিলাপ করছেন। বুক চাপড়ে বলছেন, ‘আদরের সন্তানকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও।’ একইভাবে ছেলেকে হারিয়ে আহাজারি করছেন আবু তাহেরের মা খায়রুন নেছা বেগম ও জব্বারের মা আলে নুর বেগম।
এদিকে স্বামীর মৃত্যুতে আবু তাহেরের স্ত্রী মাকসুদা বেগম বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। দেড় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। আবু তাহেরের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে বাড়িতে ভিড় করছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। কিন্তু মাকসুদা কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। তিনি শুধু কাঁদছেন।
শনিবার মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কল্যাণ উইংয়ের প্রথম সচিব (শ্রম) এ এস এম জাহিদুর রহমান জানান, দূতাবাসের পক্ষ থেকে মৃত তিনজনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মরদেহ শিগগিরই বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জানান, তিনজনের কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। হতাহতদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি দল হতাহতদের স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। পরবর্তী সময়ে তাদের সব রকমের তথ্য ও সহযোগিতা দেওয়া হবে।
- বিষয় :
- আগুনে পুড়ে মৃত্যু