ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

দুই দফায় ৯ একর বনভূমি উদ্ধার

দুই দফায় ৯ একর বনভূমি উদ্ধার

কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া বনের দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে চলছে অভিযান সমকাল

 মৌলভীবাজার ও  কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:০০

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সাড়ে ১২শ হেক্টর বনাঞ্চলে বিস্তৃত। অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী মহল এ সংরক্ষিত বনের শত শত একর জমি দখল করে নিয়েছে।
সর্বশেষ রোববার লাউয়াছড়া বনের প্রায় চার একর জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বদরুল আলম জেনারের দখলে থাকা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘হীড বাংলাদেশ’-এর পশ্চিম পাশে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের এই জায়গা উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে বন বিভাগ। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সম্প্রতি বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ দু-দফায় ৯ একর বনভূমি উদ্ধার করেছে। উদ্ধার করা ভূমিতে গাছের চারা লাগানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বদরুল আলম জেনারের কাছ থেকে ওই জমি বন্ধক নিয়েছিলেন শ্রীমঙ্গলের শাহ আলম। তিনি জানান, জেনারের কাছ থেকে পাঁচ বছরের জন্য জমি লিজ নিয়ে এখানে লেবুর চাষ করেছেন। অগ্রিম দুই বছরের জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাকি টাকা লেবু বিক্রি করে দেওয়ার কথা। তবে জমি দখলমুক্ত করার পর বিপাকে পড়েছেন লিজগ্রহীতা শাহ আলম।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জামিল মোহাম্মদ খান, রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে দখলকৃত ভূমি উদ্ধার করা হয়। এরপর বন বিভাগ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করেন সেখানে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জামিল মোহাম্মদ খান জানান, অভিযান পরিচালনার সময় কেউ মালিকানা দাবি করতে আসেনি। ফলে দীর্ঘদিন বেহাত থাকা বন বিভাগের জমি দখলে নেওয়া সহজ হয়েছে।
অপরদিকে লাউয়াছড়ার বেশকিছু বনভূমি দখল করে চা বাগান করেছিলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ। বন বিভাগ ২০১৮ সাল থেকে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংরক্ষিত বনের জমি উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। সাবারী টি প্লান্টেশন নামে গড়ে তোলা চা বাগানের জন্য অবৈধভাবে দখল করা জমিসহ বেহাত হওয়া সব জমি উদ্ধারে বন বিভাগ ২০১০ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময় সার্ভের চেষ্টা করছিল। রহস্যজনক কারণে সংরক্ষিত বনভূমির জায়গা উদ্ধারে জরিপ কার্যক্রম সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের লোকজন।
৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর বন বিভাগ লাউয়াছড়ার জমি উদ্ধারে উল্লিখিত এলাকায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে ৫ একর ভূমি উদ্ধার করে। অভিযোগ রয়েছে, আরও বেশকিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বনের জমি দখল করে রেখেছেন। ২০১৮ সালে বন বিভাগ লাউয়াছড়া বনের জমি ডিমারগেশনের উদ্যোগ নেয়। নানা জটিলতায় পরিমাপ সম্পন্ন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ফের বন বিভাগ সার্ভের উদ্যোগ নিয়ে জরিপ অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। সঠিকভাবে জরিপ কার্যক্রমের পর জানা যাবে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আর কী পরিমাণ জমি বেদখল রয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে বন বিভাগ সূত্র।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বছরের পর বছর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অবৈধভাবে লাউয়াছড়া বনের জমি দখলে রেখেছেন। সঠিকভাবে জরিপ হলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিএফও ড. জাহাঙ্গীর আলম ৯ একর জমি উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে সমকালকে জানান, নথি অনুসারে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সাড়ে ১২শ হেক্টর সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। বর্তমানে কতটুকু জমি বেহাত রয়েছে তা জরিপ ছাড়া বলা যাবে না। লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমির সঠিক সীমানা নির্ধারণের লক্ষ্যে সার্ভের জন্য জরিপ অধিদপ্তরের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

×