মেয়রের চেয়ারে শাহাদাত বিপুল দেনা কাঁধে

ডা. শাহাদাত হোসেন
আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:১১
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৪১১ কোটি টাকা দেনার ভার কাঁধে নিয়ে মেয়রের আসনে বসছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। বিপুল এই দেনা নিয়ে করপোরেশন পরিচালনা করাই হবে তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চসিকে ভেঙে পড়েছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও নাগরিক সেবা কার্যক্রম। দ্রুতই এসব ঠিক করতে হবে তাঁকে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের সমস্যা তো রয়েছেই।
মেয়রের শপথ নেওয়ার পর আজ মঙ্গলবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছুবেন ডা. শাহাদাত। দুপুরে রেলওয়ে স্টেশনে নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন তিনি। এরপর হজরত শাহ আমানত (রহ.) এর মাজার জিয়ারত শেষে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বিকেল ৫টায় মুখোমুখি হবেন সাংবাদিকদের।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সমকালকে বলেন, ‘দেনা শোধ করে চসিককে একটি স্বাবলম্বী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য। সেজন্য কাজ করে যাব।’ জলাবদ্ধতা নিরসনে অগ্রাধিকার থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নাগরিক দুর্ভোগ দূর করে চট্টগ্রামকে একটি বাসযোগ্য নগর গড়তে কাজ করব।’ পাশাপাশি প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে মনোনিবেশ করবেন বলে জানান তিনি।
দেনা ৪১১ কোটি টাকার বেশি
চসিকের দেনা দাঁড়িয়েছে ৪১১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। বিভিন্ন কাজের বিলবাবদ ঠিকাদাররা পাবেন প্রায় ২৬০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাওনা রয়েছে ৬৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। তাদের ভবিষ্যৎ তহবিলের সাড়ে ৫৬ কোটি ৬০ টাকা জমা করেনি সিটি করপোরেশন। আর বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে প্রায় ২৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। বিল বকেয়া থাকায় ২০১৭ সালে একবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় পিডিবি। পাওনা টাকার জন্য অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদাররা প্রায়ই মেয়র ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দপ্তরে ধরনা দেন। টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে তাদের মধ্যে।
কে কত দেনা রেখে গেছেন
১৯৯৪ সালে প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার সময় সিটি করপোরেশনের দেনা ছিল ২৫ কোটি টাকা। ২০১০ সালে ১৯৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকার দেনা রেখে বিদায় নেন তিনি। এর পর সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম ২০১৫ সালের মার্চে দায়িত্ব ছাড়ার সময় করপোরেশনের বকেয়া ছিল ২৯৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ২০২০ সালে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা দেনা রেখে যান সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ২০২১ সালে মেয়রের দায়িত্ব নেন রেজাউল করিম চৌধুরী। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান তিনি। এরপর আদালত ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন। গত অক্টোবর পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের দেনা দাঁড়িয়েছে ৪১১ কোটি ৩৮ টাকা।
প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা
সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সাড়ে তিন বছরে অন্তত ৩০০ কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি। পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি, নেওয়া হয়নি পরীক্ষা। শুধু আবেদনের ভিত্তিতে শ্রমিক থেকে কলেজ শিক্ষক পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেতন নির্ধারণ হয়েছে মেয়রের মর্জিমতো। শ্রমিক পদে নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করছেন কেউ কেউ। এসব নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে।
সেবা নিশ্চিত হবে কীভাবে
গত ৫ আগস্টের পর সিটি করপোরেশনে আসা বন্ধ করে দেন তৎকালীন মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। আত্মগোপনে চলে যান ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। এখন নাগরিক সেবা দিতে সহযোগিতা করতে চান বিএনপিপন্থি সাবেক কাউন্সিলররা। চসিকের সাবেক কাউন্সিলর ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন, ‘২০১০ সালের পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। গত দুই নির্বাচনে যারা মেয়র ও কাউন্সিলর হয়েছেন তারা প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নন। ২০১০ সালের নির্বাচন পর্যন্ত সাবেক কাউন্সিলররা চট্টগ্রামের উন্নয়নে সিটি করপোরেশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’
- বিষয় :
- ডা. শাহাদাত হোসেন