ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

দুস্থদের চাল কারসাজি করে গুদামে সরবরাহ

দুস্থদের চাল কারসাজি  করে গুদামে সরবরাহ

ফাইল ছবি

সনি আজাদ, চারঘাট রাজশাহী 

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৪

রাজশাহী চারঘাট উপজেলার সরকারি খাদ্য গুদামে তিন বছরে এক ছটাক ধান কিংবা গম সংগ্রহ হয়নি কিন্তু চাল সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। মিল সচল না থাকলেও এত চাল সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে সশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির চাল কারসাজির মাধ্যমে গুদামে সরবরাহ হচ্ছে। 
উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড আছে ৭ হাজার ৭৫৬টি। উপকারভোগীদের ৩০ কেজির বস্তা থেকে গড়ে তিন কেজি করে প্রায় ২৩  টন (২৩ হাজার ২৬৮ কেজি) চাল সরানো হচ্ছে। বছরে পাঁচবার কর্মসূচির চাল দেওয়া হয়। তাতে বছরে ১১৬  টন চাল গায়েব হচ্ছে বস্তা থেকে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ টিআর ও কাবিখার চাল কিনেও বন্ধ রাইস মিলের নামে সংগ্রহ দেখানো হচ্ছে। খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মচারী ও ডিলার যোগসাজশে এ অনিয়ম হচ্ছে।
সদর ইউনিয়নের উপকারভোগী মুকিবার রহমান বলেন, প্রতি মাসেই বস্তায় চাল কম থাকে। বারবার জানিয়েও লাভ হয় না। গত মাসেও ৭ কেজি কম চাল পেয়েছি। একই অভিযোগ করেন সরদহ ইউনিয়নের রবিউল ইসলাম। 
খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে ৬৪৪ টন ধানের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক ছটাকও সংগ্রহ করতে পারেনি গুদাম কর্তৃপক্ষ। অথচ ১৫২ টন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৭৯ টন; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২৭ টন বেশি। মেসার্স রনজিত রাইস মিল ও রণকৃষ্ণ আংশিক অটো মিল নামে দুটি চাল কল থেকে  
এসব চাল সংগ্রহ করা হয়। বাস্তবে চালকল দুটি বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। তাই এসব মিল 
থেকে লক্ষ্যমাত্রার বেশী চাল সরবরাহ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ বলছে, বাজার মূল্যের চেয়ে সরকারি গুদামে প্রতি কেজি ধান ও গমের দাম প্রতি বছরই ৮-১০ টাকা কম থাকায় এক ছটাকও ধান-গম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন, বাজারের চেয়ে গুদামে চালের দাম ১২-১৫ টাকা কম। তাহলে তারা এত চাল সংগ্রহ করল কীভাবে? 
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার হাফিজুর রহমান বলেন, বস্তায় সিল মারা থাকে। তাই অনিয়ম করার সুযোগ নেই। গুদাম থেকে যেভাবে বস্তা আসে সেভাবেই সরবরাহ করা হয়। শত শত বস্তা ওজন করে নেওয়া সম্ভব হয় না। 
স্থানীয় পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উপজেলায় সচল কোনো চাল মিল নেই। এখানে আমন ছাড়া অন্য ধান উৎপাদনও খুব কম হয়। ব্যবসায়ীরা নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চাল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য না হওয়ায় তারা গুদামে ধান দিতে পারেন না। অথচ বাজারে অতিরিক্ত দাম থাকা সত্ত্বেও কীভাবে চাল দিচ্ছেন তা ভেবে দেখার বিষয়। 
মাদ্রাসাশিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পাওয়ার পর এলাকার অনেকেই বস্তায় চাল কম থাকার অভিযোগ করছেন। আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে টিআর বরাদ্দে চাল থাকলেও তা গুদামে থাকতেই বিক্রি হয়ে হয়ে যায়। গুদামের চাল গুদামেই বিক্রি হওয়ায় তা আর খাবার উপযোগী থাকছে না। 
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইয়াসিন আলী বলেন, মিল ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে চাল সংগ্রহ করা হয় না। তবে মিল মালিকদের কাছে পর্যাপ্ত চাল না থাকলে অনেক সময় অন্য জায়গা থেকে কিনে সংগ্রহ করেন। কিন্তু গুদামের চাল গুদামে বিক্রি হচ্ছে এটি সঠিক না। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালও গুদাম থেকে সংগ্রহ করার সময় ডিলারদের ওজন বুঝিয়ে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। 

আরও পড়ুন

×