ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ছাড়পত্র ছাড়াই নতুন ৭ ভাটা ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি

ছাড়পত্র ছাড়াই নতুন ৭ ভাটা ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি

মির্জাপুরে অবৈধ ভাটায় ইট পোড়ানোর চেষ্টা সমকাল

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:১৯

সরকার ঘোষণা দিয়েছে নতুন করে কোনো ইটভাটা স্থাপনের ছাড়পত্র দেওয়া হবে না। কিন্তু ছাড়পত্রের তোয়াক্কা না করেই টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নতুন করে ৭টি ইটভাটা স্থাপন করে ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। 
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অবৈধ  ইটভাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার ৯ দিন পার হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর।
নতুন করে প্রস্তুত অবৈধ ভাটাগুলো হলো– বহুরিয়া ইউনিয়নের বহুরিয়া গ্রামে আরবিসি ব্রিকস, এমএসবি ব্রিকস, বাটা ব্রিকস, চান্দুলিয়া গ্রামে এইচইউবি ব্রিকস, গোড়াই ইউনিয়নের দেওহাটা মল্লিকপাড়া গ্রামে সনি ব্রিকস, দেওহাটা পাথালিয়াপাড়া গ্রামে বিঅ্যান্ডবি ব্রিকস, দেওহাটা ও বাইমহাটী গ্রামে রান ব্রিকস।
মির্জাপুর উপজেলায় গত বছর পর্যন্ত ১০১টি ইটভাটায় ইট তৈরি ও পোড়ানো হয়েছে। সরকারের অনুমোদন না নিয়েই এ বছর আবাদি জমিতে আরও সাতটি ইটভাটা নতুনভাবে স্থাপিত হয়েছে। ওইসব ভাটায়ও ইট তৈরি ও পোড়ানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এই ইট পোড়াতে ভাটায় জ্বালানি হিসেবে বিপুল পরিমাণ কাঠ স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া নিয়ম না মেনে ওইসব অবৈধ ইটভাটায় বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সঞ্চালন লাইন থেকে ২ থেকে ৫টি খুঁটির মাধ্যমে ১৫ কেবির ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটায় ১৪ থেকে ২০ একর আবাদি জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন ইটভাটার মালিকদের আরও একাধিক ইটভাটা রয়েছে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার ওই সাতটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, ইট পোড়ানোর জন্য বিপুল পরিমাণ কাঠের স্তুপ রাখা। ভাটার কারণে কমছে আবাদি জমি, মাটি পরিবহনে নষ্ট হচ্ছে রাস্তা। হুমকির মুখে পরিবেশ।
গত ৬ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মির্জাপুরে একটি প্রকল্প পরিদর্শনে আসেন। সেখানে সংবাদকর্মীরা অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, নতুন করে ইটভাটা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। বিদ্যুৎ সংযোগ বৈধও হয়, আবার অবৈধও হয়। হোল্ডিং নম্বর না থাকলে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার সুযোগও নেই।
বহুরিয়া এলাকার আরবিসি ব্রিকসের মালিক বেল্লাল মিয়ার ভাষ্য, তিনি ট্রেড লাইসেন্স ও কৃষি অফিসের ছাড়পত্র নিয়ে ইটভাটা প্রতিষ্ঠা  করেছেন। তাঁর ভাটায় প্রায় ১৫ একরের বেশি আবাদি জমি রয়েছে।
কথা হয় দেওহাটা পাতিলাপাড়া এলাকায় আবাদি জমিতে গড়ে ওঠা বিএন্ডবি ব্রিকসের মালিক সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। তাঁর দাবি, ভাটার জন্য ১ হাজার ৪০০ শতাংশ জমি ভাড়া নিয়েছেন তিনি। প্রতি শতাংশ জমির ভাড়া হিসেবে দেড় হাজার টাকা দিতে হবে।
পল্লী বিদ্যুৎ মির্জাপুর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমতিপত্র ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা না। তারপরও খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন জানান, ভাটা মালিকরা প্রত্যয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তাঁর অফিসের প্রাক্তন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের সুপারিশে আরবিসি ব্রিকসের মালিক বেল্লাল মিয়াকে প্রত্যয়ন দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছেন বলে জানান টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন

×