ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

অর্ধেক মজুরিতে কাজ করেন নারী শ্রমিক

অর্ধেক মজুরিতে কাজ করেন নারী শ্রমিক

উল্লাপাড়ার উধুনিয়া এলাকায় চাতালে শুকানোর আগে চলনবিল থেকে সংগৃহীত ছোট মাছ ধুয়ে পরিষ্কার করছেন নারী শ্রমিকরা সমকাল

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:০১

চলনবিল এলাকার বড় পাঙ্গাসী গ্রামে শুঁটকির চাতালে কাজ করেন স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্তী দাসসহ কয়েকজন। স্থানীয় বায়েজিত হোসেনের চাতালে কাজ করার সময় জয়ন্তী বলছিলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা কাজ করেন। অথচ প্রতিদিন তাদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। তাদের অনেক পরে পুরুষ শ্রমিকরা কাজ করতে আসেন। কিন্তু তাদের দৈনিক মজুরি দেওয়া হয় ৪০০ টাকা।
উল্লাপাড়ার চলনবিল এলাকায় শুঁটকি মাছের চাতালে কাজ করা নারীদের এভাবে পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় মজুরি কম দেওয়া হচ্ছে। উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর, বড় পাঙ্গাসী, উধুনিয়া ও বাঙ্গালা ইউনিয়নে এসব চাতাল রয়েছে। প্রতিবছর এলাকায় অন্তত ৪০ জন ব্যবসায়ী চাতাল তৈরি করে শুঁটকি উৎপাদন ও বিক্রি করেন। অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত উৎপাদনের মৌসুম। চলনবিল থেকে পুঁটি, চাপিলা, বোয়াল, বেলে, দাড়কিনাসহ দেশীয় মাছ শিকার করে শুকিয়ে শুঁটকি করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলনবিলের শুঁটকি মাছের চাহিদা রয়েছে সারাদেশে। এ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিকরা বেশি কাজ করেন। এলাকার গরিব ও অসচ্ছল পরিবারের নারীরা এতে যুক্ত। নারীরা মাছ কাটা, পরিষ্কার করা, ধোয়া এবং রোদে শুকানোর কাজ করেন। উধুনিয়া এলাকায় মোতাহার হোসেনের শুঁটকির চাতালে কাজ করছিলেন শাহিনুর খাতুন ও খুশি খাতুন। তারাও মজুরি কম পাওয়ার কথা জানান। 
শাহিনুরের ভাষ্য, পরিবারে অভাব থাকায় চাতালে কাজ করেন তিনি। হাড়ভাঙা খাটুনির পর সন্ধ্যায় মালিক ২০০ টাকা দিলে নিজের কাছেই খুব অসহায় মনে হয় তাঁর। আর খুশি খাতুন বলছিলেন, মজুরি বাড়ানোর জন্য মালিকপক্ষের কাছে অনেকবার আবেদন করেছেন। কিন্তু তারা আমলে নেননি। অর্ধেক মজুরিতেই তারা কাজ করছেন। কাজের ন্যায্য মজুরি দেওয়ার দাবি জানান তারা।
বড় পাঙ্গাসী গ্রামের চাতাল মালিক বায়েজিত হোসেন নারী শ্রমিকদের কম মজুরির কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আগে একজন চাতাল মালিক ন্যূনতম ২০ থেকে ২৫ টন শুঁটকি উৎপাদন ও বিপণন করেছেন। কিন্তু দু-তিন বছর ধরে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ অঞ্চলে বরাবরই নারী শ্রমিকদের মজুরি কম ছিল। তারা সেভাবেই মজুরি দিচ্ছেন। নারীদের দাবি পূরণে তারা আন্তরিক। কিন্তু উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাড়াতে পারছেন না। তবে উৎপাদন বাড়লে যথাযথ মূল্যায়ন করবেন। 
আরেক শুঁটকি উৎপাদনকারী মোতাহার হোসেনও একই ধরনের কথা বলেন। তাঁর ভাষ্য, কয়েক বছর ধরে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ না পেয়ে লোকসান গুনছেন তারা। বছরে ছয় মাস এ কাজ করতে পারেন তারা। চলনবিলে এখন ফেব্রুয়ারি মাসের শেষেই পানি শুকিয়ে যায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় তাদের কার্যক্রম। তারা লাভবান হলে নারী শ্রমিকদের মজুরিও বাড়াবেন।
উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, চলনবিলের উল্লাপাড়া অংশে বছরে অন্তত ৭০০ টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়। এসব মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মৌসুমি শ্রমিকরা বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে এ বছর মাছ কম থাকায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। নারী শ্রমিকদের মজুরি কম দেওয়ার বিষয়টি তারা জানেন। তাদের মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে চাতাল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন। 
 

আরও পড়ুন

×