ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

পাহাড়ের অত্যাধুনিক অস্ত্র সমতলের অপরাধে

পাহাড়ের অত্যাধুনিক অস্ত্র সমতলের অপরাধে

ফাইল ছবি

 আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম 

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:০৮

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ও সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে অত্যাধুনিক অস্ত্র ঢুকছে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে। সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে এ অস্ত্র পেশাদার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। হত্যা, রাজনৈতিক বিরোধসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রকাশ্যে ব্যবহার হচ্ছে এসব অস্ত্র। পেশাদার তিন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। তাদের কাছ থেকে একটি অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সন্ত্রাসীদের কাছে একে-৪৭ রাইফেলের মতো মারণাস্ত্র সরবরাহের তথ্যও দিয়েছে তারা।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শুধু চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় অন্তত ১৮টি সংঘর্ষ, হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ১৪ নভেম্বর রাতে উপজেলার নোয়াপাড়ায় মুখোশধারী অস্ত্রধারীদের ছোড়া গুলিতে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এর আগে গত ২১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীতে এক যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

সিএমপি সূত্র জানায়, গত শুক্রবার ভোররাতে নগরের চান্দগাঁও থানার টেকবাজারপুল এলাকায় শাহেদ ভবনের চতুর্থ তলার একটি বাসা থেকে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন– মিদোক মারমা, উহলাঞো মারমা ও মুইচিং মারমা। তাদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ৭ দশমিক ৬৫ মিমি একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও সাত রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ও সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে অস্ত্রগুলো সীমান্ত দিয়ে বান্দরবানে আসছে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্রগুলো কিনে এনে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে তারা। এর আগে দুইটি অস্ত্র বিক্রির কথা স্বীকার করে। তবে তাদের মোবাইল ফোনের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত এক ডজন অস্ত্র বেচাকেনার তথ্য পেয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

যে দুইটি পিস্তল বিক্রি করার কথা স্বীকার করেছেন, তার একটি বিক্রি করেছেন রাউজানের শহীদ মেম্বারের কাছে, অন্যটি চট্টগ্রাম শহরে। গত শুক্রবার উদ্ধার হওয়া অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ একটি একে-৪৭ রাইফেল সন্ত্রাসীদের সরবরাহের কথা ছিল তাদের। তার আগেই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি অত্যাধুনিক পিস্তলটি পেলেও একে-৪৭ রাইফেলটি পায়নি পুলিশ। সেটি শুক্রবার বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে আসার কথা ছিল।
পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপটি কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বলে ধারণা করছে তদন্তে যুক্ত কর্মকর্তারা। কারণ সন্ত্রাসী গ্রুপটি এর আগে অর্থের বিনিময়ে একটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। এ ছাড়া গত রোববার বান্দরবানের রুমার দুর্গম হানজুরাইপাড়া থেকে কেএনএফ সদস্যদের অস্ত্র, গুলি ও ইউনিফর্ম উদ্ধার করেছিল বিজিবি। 
চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাহাড়ের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে গ্রেপ্তার তিনজনের যোগসূত্র রয়েছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে সীমান্ত হয়ে একে-৪৭ রাইফেলের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলো দেশে ঢুকছে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে এনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করছে তারা। যাদের কাছে অস্ত্রগুলো বিক্রি করেছে, তাদের কয়েকজনের তথ্য পাওয়া গেছে। 

একই থানার এসআই মোমিনুল হাসান বলেন, তিনজনই পেশাদার অস্ত্র ব্যবসায়ী। তারা এখন পর্যন্ত দুইটি অস্ত্র বিক্রির কথা স্বীকার করেছে। বাস্তবে আরও বেশি তারা বেচাকেনা করেছে। সে তথ্য আমরা তাদের হোয়াটসঅ্যাপের কথোপকথন থেকে পেয়েছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এনে জেরা করা হলে তথ্য আদায় করা সম্ভব হবে। 
এদিকে ৫ আগস্টের সরকার পতনের পর বিভিন্ন ঘটনায় চট্টগ্রামে অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে রাউজানে। উপজেলার শুধু নোয়াপাড়া ইউনিয়নে অন্তত ১৫টি ঘটনায় অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
গত ১১ অক্টোবর দুপুরে বাড়ির সামনে গুলি চালিয়ে ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ এবং ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাগরকে আহত করে সন্ত্রাসীরা। গত ১৪ নভেম্বর দু’জনই মুখোশধারী সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। মাসুদের বাবা সিরাজুল হক বলেন, প্রথম দফা হামলার ঘটনার এক মাস পার হলেও আসামিরা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরছে। 
রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান চলছে। কিন্তু তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। 
সিএমপির উপকমিশনার (উত্তর) ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্রগুলো গ্রেপ্তারকৃতরা পার্বত্য চট্টগ্রামের ভারত সীমান্ত থেকে এনে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিক্রি করে বলে স্বীকার করেছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অস্ত্রের উৎস, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে।

আরও পড়ুন

×