ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

কর্মদিবসেও তালাবদ্ধ থাকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর

কর্মদিবসেও তালাবদ্ধ থাকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর

খালিয়াজুরী উপজেলা পরিষদ প্রায় জনমানবশূন্য। গত সোমবার তোলা ছবি সমকাল

 নেত্রকোনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:৩৪

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গড় হাজিরা আর পদ শূন্যতার কারণে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর প্রায়ই কর্মদিবসেও থাকে তালাবদ্ধ। আবার কয়েকটি দপ্তরে স্থানীয় কাউকে দিয়ে দরজা খোলা রাখলেও সেসবে থাকেন না দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা। এসব কথা জানিয়ে স্থানীয়রা বলছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি আর এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহির অভাবেই এমন দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে।
১৮ নভেম্বর সরেজমিন দেখা গেছে, খালিয়াজুরী উপজেলা সমবায় অফিস, যুব উন্নয়ন অফিস, আনসার ভিডিপি অফিস, পরিসংখ্যান অফিস তালাবদ্ধ। আবার সমাজসেবা অফিসের দরজা খোলা থাকলেও সেখানে ছিলেন না কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ কর্মস্থলে অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা প্রায়ই আসেন না বললেই চলে। আর পূর্ণ দায়িত্বে পদায়িত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী কাগজে-কলমে উপস্থিতি দেখালেও বাস্তবে কর্মদিবসের অধিকাংশ সময়ই থাকেন অনুপস্থিত। এর মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে বেশি আঙুল তুলেছেন স্থানীয়রা। তারা হলেন- উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা অজিত কুমার ঘোষ, রিসোর্স সেন্টার ইন্সট্রাক্টর মঞ্জুআরা বেগম, পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম তৈকির ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আজিজুর রহমান।
খালিয়াজুরী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান কেষ্টু জানান, নিয়মিত থাকেন না সমবায় কর্মকর্তা আজিজুর রহমান। তাঁকে মাসে অন্তত ১৫-২০ দিন কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করেছেন তিনি।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, খালিয়াজুরীর অফিস পাড়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে কর্মচারীরাও নিয়মিত কর্মস্থলে থাকেন না। কর্মকর্তাদের গড় হাজিরা আর পদ শূন্য থাকায় এখানে দাপ্তরিক কাজে ব্যাপক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এতে এসব দপ্তরে কাজ করতে এসে জনসাধারণ দিনের পর দিন হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
কর্মস্থলে অনুপস্থিতি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম তৈকির দাবি করেন, তিনি পাশের উপজেলা মোহনগঞ্জে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তাই বাধ্য হয়েই মাঝে মধ্যে খালিয়াজুরী উপজেলায় অনুপস্থিত থেকে মোহনগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া অনুস্থিতির অভিযোগের আঙুল অন্য যেসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে সবাই প্রায় একই সুরে বলছেন, তারা নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানা, হাসপাতাল, ব্যাংক ছাড়া এ উপজেলায় সরকারি দপ্তর রয়েছে ২১টি। এর মধ্যে ১০টি দপ্তরে ১২ জন কর্মকর্তার পদ দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে ফাঁকা। শূন্য পদগুলো হলো– উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, একাডেমিক সুপারভাইজার, সাব-রেজিস্টার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পদ। এসব পদের বেশির ভাগই শূন্য হয়েছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। এ পদগুলোর বিপরীতে জেলা কিংবা অন্য উপজেলার কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসের ভাষ্য, খালিয়াজুরী উপজেলায় ইউএনও পদায়িত হতে কয়েকদিন লাগলেও সহকারী কমিশনার (ভূমি) পাওয়া যাবে অচিরেই। 

আরও পড়ুন

×