বাউল আসর দুর্বৃত্তদের হামলায় পণ্ড

মনিরামপুরের পাড়দিয়া গ্রামের এই বাড়িতে বাউল গানের আসর দুুর্বৃত্তদের হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে
যশোর অফিস
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ০২:০৮
যশোরে দুুর্বৃত্তদের হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে বাউল শিল্পীদের দুইদিনব্যাপী সাধু সংঘের বাউল গানের আসর। সোমবার দুপুরে মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের পাড়দিয়া গ্রামে এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারসহ সাধু সংঘে আসা বাউল শিল্পীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, এক যুগ ধরে নিজ বাড়িতে এই অঞ্চলের বাউল শিল্পীদের নিয়ে উৎসবের আয়োজন করে আসছেন এসএম ফজলুর রহমান অরপে মন্টু বাউল। মন্টু ফকির অভিযোগ করে বলেন, রোববার স্থানীয় বিএনপি নেতা ফারুক হোসেন তাকে সাধু সংঘ বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু ওই নির্দেশ না মানায় সোমবার দুপুরে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শামিম খাঁ, জগন্নাথ ওরফে জগোসহ তিনজন একটি মোটরসাইকেলে তার বাড়িতে চড়াও হয়ে লালন আশ্রয় ও বাউলদের আখড়াতে হামলা চালায়। তাদের টিনের বাড়িসহ আখড়ায় দা দিয়ে কোপাতে থাকে। ওই সময় তারা প্যান্ডেলের সামিয়ানা, চেয়ার, হাঁড়ি পাতিল ভাঙচুর করে। তারা আখড়া ঘরে থাকা কাঁথা বালিশ ফেলে দেয় এবং ঘরে থাকা ৭-৮শ' টাকা লুট করে নিয়ে যায়। তার ছেলের বৌয়ের দুটি ছাগল নিয়ে টানাটানি করতে থাকে। সেই সময় তাদের নিষেধ করলে তারা টাকা দাবি করে। তখন তিনি একজন প্রতিবেশীর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা ধার করে দিলে তারা হুমকি দিয়ে চলে যায়।
মন্টু ফকিরের স্ত্রী মনোয়ারা ফকির জানান, দুপুরে তিনটি মোটরসাইকেলে আসে তিনজন। তারা কিছু বলার আগেই লালন ফকিরের ঘরের টিনে কোপাতে শুরু করে। ভেতরে প্রবেশ করেই ভাঙচুর করে। এরপর খানকা ঘর ভাঙচুর করে। ভেতরে আখড়ায় থাকা বিভিন্ন বকশিসের টাকাও নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকে ফকির পাড়াতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দলবেঁধে তারা ফন্টু ফকিরের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে।
খুলনার চুকনগর থেকে সাধু সংঘে অংশ নেওয়া রফিক বাউল জানান, কয়েক বছর ধরে সাধু সংঘে আসি। এবারও এসে দেখি, অনেক সাধু এসেছে। তবে মন্টু ফকিরের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। লালনের ঘর, ফকিরে খানকা ঘরও ভাঙচুর, লুটপাট হয়েছে। বাড়িতে আতঙ্কের ছাপ। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
যশোর বাউলিয়া সংঘেরর কযেকজনকে এই সাধু সংঘে যোগ দিতে দেখা গেছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ বাউল জানান, বাউলরা মুক্ত মনের মানুষ। তারা ধর্ম জাত রাজনীতি বোঝে না। অথচ সন্ত্রাসীদের এই হামলায় পণ্ড হয়ে গেল সাধু সংঘের বাউল গান। জড়িতদের দ্রুত বিচার জানিয়েছেন বাউল শিল্পীরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শামিম খাঁ জানান, মন্টু ফকিররা বাউল সংঘের নামে গাঁজা ব্যবসা করে। স্থানীয়রা চায় না এই অনুষ্ঠান হোক। আমরা তার বাড়িতে গেছিলাম, তবে কোনো ভাঙচুর করা হয়নি।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম বলেন, ‘এখনও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- হামলা
- বাউল গানের অনুষ্ঠান