ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

শত চেষ্টায়ও খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না, অবশেষে বাড়ির সামনে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবস্থান  

ঋণখেলাপির বাড়ির সামনে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঋণ গ্রহীতা দুই ব্যবসায়ীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে ব্যানার হাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারারী

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৫:১৬ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৬:১৩

খেলাপি ঋণ আদায়ে এবার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দেখা গেল কৃষ্টিয়ায়। ঋণ গ্রহীতা দুই ব্যবসায়ীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে ব্যানার হাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারারী।  মাইক হাতে শীর্ষ কর্মকর্তারা বক্তব্যও দিয়েছেন। ঋণ আদায়ে সামাজিকভাবে চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে এমন উদ্যোগ নেওয়া হযেছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।  

শনিবার ছুটির দিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় কুষ্টিয়ার এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঋণ গ্রহীতাদের বাড়ির সামনে গিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন। ঋণ গ্রহীতার ছবিযুক্ত ব্যানার হাতে নিয়ে মানববন্ধন করেন তারা। বেলা ১১ থেকে দুপুর ১টা একটা পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়ায় ঋণখেলাপি রাশিদুল ইসলামের বাড়ি এবং পুলিশ লাইনের সামনে হাজীগলিতে ইউনুস আলীর বাড়ির সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনেও একই কর্মসূচি পালন করেন। ঋণ খেলাপি দু’জনই চালকল ব্যবসায়ী।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, রাশিদুল চালকল ব্যবসায়ী। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বালিয়াশিশা এলাকায় আল্লাহর দান রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী। তিনি রাইস মিলের নামে ২০১০ সালে ব্যাংক থেকে প্রথমবার ১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এরপর তিনি বছর বছর ধরে বিনিয়োগ বাড়াতে থাকেন। কিন্তু ব্যাংককে টাকা ঠিকমতো দেন না। বর্তমানে ব্যাংক তার কাছে ১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পাবে। গত ৬ মাস ধরে তিনি কোনো টাকা পরিশোধ করছেন না। বারবার নোটিশ করা হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।

একইভাবে কবুরহাট এলাকার ইফাদ অটো রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী ইউনুস আলী তার চালকলের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ২০১৭ সালে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। বর্তমানে ব্যাংক তার কাছ থেকে ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পাবে। গত তিন বছর ধরে তিনি কোনো টাকা দেন না। বারবার নোটিশ করা হলেও ঋণ পরিশোধে তিনিও কোনো ব্যবস্থা নেননি।

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলছেন, নিরুপায় হয়ে শনিবার সকাল থেকে তাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। মাইক হাতে শীর্ষ কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন। এ সময় বাড়ির সামনে এমন কর্মসূচি দেখতে আশপাশের বাসিন্দারা সেখানে জড়ো হন। তাঁরা ব্যতিক্রম এই উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চান। পরে ব্যাংক কর্মকর্তারা বিষয়টি সবাইকে জানান। বেলা ১১টার দিকে কোর্টপাড়া এলাকায় আধাঘণ্টা ধরে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী। ব্যানার হাতে আধাঘণ্টা অবস্থান করে তাঁরা চলে যান। 

অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ ইউনুছ আলী বলেন, ‘রাশিদুল ইসলামের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর বাড়ি ও অফিসে গিয়েছিলাম। তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাঁর কারণে শাখায় আমানতকারীদের টাকা দিতে পারছি না। কারণ আমানতের টাকা দিয়েই তো তাদের বিনিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।’

রাশিদুল ইসলামকে বাসায় পাওয়া যায়নি। এজন্য তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাড়ির অন্য বাসিন্দারাও কথা বলতে রাজি হননি।

একইভাবে বেলা ১২টার দিকে ব্যাংকের কর্মকর্তারা ইউনুস আলীর বাড়ির সামনে গিয়ে একই কর্মসূচি পালন করেন। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনেও অবস্থান নেন ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

ব্যাংক কর্মকর্তা মইনুল হোসেন বলেন, শত চেষ্টা করেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। সামাজিক চাপ প্রয়োগের জন্যই তাঁরা এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

×