ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

তালা খুললেও সেবা বন্ধ, ভোগান্তিতে জনসাধারণ

তালা খুললেও সেবা বন্ধ, ভোগান্তিতে জনসাধারণ

তালাবদ্ধ যদুবয়রা ইউপি কার্যালয়ের সামনে এক সেবাপ্রত্যাশী। সোমবার সকালের চিত্র সমকাল

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:১৩

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১১টা। তখনও জাতীয় পতাকা টানানো হয়নি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ৮ নম্বর যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। এ চিত্র গতকাল সোমবারের। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটার ঘটনায় রোববার সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় দুই দিন ধরে বিপাকে আছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। 
নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টার মধ্যে ইউপি কার্যালয় খুলে জাতীয় পতাকা তোলার কথা। সোমবার এর ব্যত্যয় চোখে পড়ে যদুবয়রায়। গ্রাম পুলিশের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোববার দুপুরে বিএনপির নেতাকর্মীরা তালা লাগিয়ে দেন এখানে। এদিন সন্ধ্যায় নেতারাই পতাকা খুলে নিয়ে যান। সোমবার সকালে কার্যালয় বন্ধ দেখে চলে যান সচিব। সেবাগ্রহীতারা এসে 
ঘুরে যাচ্ছে।
এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে পরিষদ চত্বরে আসেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ। তিনি বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে প্রায় ১৫ মিনিট বৈঠক করেন। সেখানে বক্তব্য দেন যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ, ইউনিয়নের যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, যদুবয়রা ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনিছুর রহমান, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আব্দুল মালেক প্রমুখ। তারা পরিষদ চত্বরে নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্মদিন উদযাপনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে বলেন। এ সময় তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন ওসি। দুপুর ১২টা ১৩ মিনিটের দিকে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সিরাজ খাঁ পরিষদের প্রধান ফটকের তালা খুলে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশের সদস্যরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের দাবি পূরণের আগ পর্যন্ত চেয়ারম্যান কক্ষের তালা না খোলার ঘোষণা দেন। এতে কোনো সেবাই চালু হয়নি। দুপুর ২টার দিকে আরেক দফা গিয়ে দেখা যায়, পরিষদে ছাদে জাতীয় পতাকা উড়ছে। প্রধান ফটকসহ অন্যান্য কক্ষ খোলা। চেয়ারম্যানের কক্ষটি তালাবদ্ধ। নিজ কক্ষে বসে সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলছেন সচিব রেজাউল ইসলাম।
এ সময় কথা হয় চৌরঙ্গী বাজারের মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্সের মালিক ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ। নবায়ন করতে এসেছি।’ চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সেবা বন্ধ থাকায় ফিরে যান তিনি। 
সোমবার সকালে দুই শিশুসন্তান নিয়ে পরিষদে এসেছিলেন বিলকাটিয়া গ্রামের আলিফ হোসেনের স্ত্রী বন্যা খাতুন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সন্তানের জন্মনিবন্ধন করা জরুরি। গতকাল (রোববার) এসে ফিরে গেছি। আজও ফিরে যাচ্ছি। মানুষের কষ্ট দেখার কেউ নাই।’
কেশবপুর গ্রামের যুবক মো. সিজান পাসপোর্ট করবেন। এ জন্য চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র দরকার। রোববার দুপুরে ইউপি কার্যালয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘রোববার অনেক লোকজন এসে সবাইকে বের করে দিল। আজও কার্যালয় বন্ধ।’
ইউপি সচিব রেজাউল ইসলাম বলেন, পরিষদের তালা খুললেও চেয়ারম্যান কক্ষটি তালাবদ্ধ। চেয়ারম্যানও নেই। এ কারণে সেবা না পেয়ে মানুষ ফিরে যাচ্ছেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে কার্যক্রম চালু হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শনিবার রাত ৮টার দিকে যদুবয়রা ইউপি চত্বরে ছাত্রলীগের ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কেটে নানা স্লোগান দেওয়া হয়। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নেতৃত্বে এ কেক কাটা হয়। পরে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে রাত ৯টার দিকে চেয়ারম্যান কার্যালয়ে তালা দেন। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যদুবয়রা জয় বাংলা বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা যদুবয়রা পশুহাটের টোলঘরে ভাঙচুর চালিয়ে ইউপি কার্যালয়ে যান। সেখান থেকে সচিব, গ্রাম পুলিশের সদস্য ও সেবাপ্রত্যাশীদের বের করে প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন।
যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ বলেন, তাদের দাবির বিষয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেন। যে কারণে ইউপি কার্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে; থানায়ও দেবেন। 
যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মোবাইল ফোনে সোমবার বলেন, কার্যালয় তালাবদ্ধ। পরিস্থিতি কিছুটা অশান্ত থাকায় পরিষদে যাওয়া হয়নি। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে পরিষদের তালা খোলার ব্যবস্থা করেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন। জনসাধারণের জন্য দ্রুত সেবা চালুর ব্যবস্থা করা হবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে সেবা বন্ধ থাকার সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। 

আরও পড়ুন

×