বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারতের পর পাথর রপ্তানি বন্ধ করল ভুটান

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। ছবি: সমকাল
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৮:১৯
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থলবন্দরে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ভারতের ফুলবাড়ি লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আন্দোলনের কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা দিয়ে আসছে না ভুটানের পাথর।
পাথর না আসায় একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট হাজারের বেশি শ্রমিক। বন্দরটি প্রায় ৯৫ শতাংশ পাথর আমদানির ওপর নির্ভর।
সোমবার বন্দরটি ঘুরে জানা যায়, চারদিন ধরে ভুটান থেকে পাথর না আসার কারণে পুরো ইয়ার্ড ফাঁকা হয়ে পড়েছে। এছাড়া গত বছরের ১৮ নভেম্বর থেকে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে বন্দরটিতে। পাথরের ওপর নির্ভর বন্দরটিতে ভারতের পাথর আসা বন্ধ থাকলেও গত কয়েক মাস ধরে ভুটানের পাথরেই চলছিল বন্দরের ব্যবসা ও শ্রমিকদের কার্যক্রম। পাথর না আসায় স্থলবন্দরে পাথরের সাইটগুলোতে শ্রমিকের পরিমাণ কমে গেছে।
স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা। গত ডিসেম্বর মাসে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছিল ৫৮০২টি ট্রাক। যার মালের ওজন ছিল ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৪৭ টন। এর মধ্যে ভারত থেকে ২৪টি ট্রাক, ভুটান থেকে ৫৬৭৯টি ও নেপাল থেকে ৯৯টি। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ২২৮ ও নেপালে ২২৬টি ট্রাকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যার ওজন ছিল ৮৩৭৪ টন। বর্তমানে বন্দরটি দিয়ে ভারত ও নেপালে বাংলাদেশ থেকে র-জুট, প্লাস্টিক, ব্যাটারি, জুট ইয়ার্ন ও পলেস্টার পেট গ্রানুলসসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
এদিকে কাস্টম সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলছেন, ভারতের ফুলবাড়িতে নতুন করে সুবিধা পোর্টাল চালুর দাবির কারণে ভুটান গত চারদিন ধরে বাংলাদেশে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছে। গত বছরের নভেম্বর ১৮ তারিখ হতে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধের পর ভুটান থেকে প্রতিদিন ২০০-৩০০ ট্রাকে পাথর আমদানি হয়েছে। এ স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয়, তার ৯৫ শতাংশই পাথর। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট সুবিধা থাকায় ব্যবসা ও পর্যটনে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করেছে স্থলবন্দরটি।
কারণ হিসেবে জানা গিয়েছিল, বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতীয় গাড়িগুলোকে রাজ্য সরকারকে ৬ চাকার ট্রাক প্রতি ৩ হাজার এবং ১০-১২ চাকার ট্রাক প্রতি ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু ভুটানের গাড়ির ক্ষেত্রে সেটি দিতে হয় না। এ কারণে ভারতের ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে আন্দোলনে নামেন ভারতীয় ট্রাকচালকরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২০২৩ সালের ৫ জুলাই ফুলবাড়ি বর্ডার লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে প্রবেশ করা ভুটানি ট্রাকগুলোকে অনলাইনে ফি দিয়ে নিবন্ধন আওতায় আনতে আন্দোলনের কারণে টানা এক মাস ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ ছিল। পরে আবারও ফুলবাড়ি বর্ডার লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে আসা ভুটানি ট্রাকগুলোকে অনলাইনে ফি দিয়ে নিবন্ধন আওতায় আনতে আবার আন্দোলন শুরু করে সেখানকার ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের চলমান অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে ভুটান যাতে নিয়মের আওতায় এসে বাংলাদেশের কাছে পাথর রপ্তানি করতে না পারে এমন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফুলবাড়িতে অনলাইন ফি নিবন্ধন চালু করার কারণে ভুটানের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি বন্ধ রাখায় কয়েক দিন ধরে পাথর আসছে না।গত নভেম্বর থেকে ভারতের পাথর আমদানিও বন্ধ রয়েছে। ভুটান সুবিধা পোর্টালের আওতায় আসলে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, আমাদেরকে বেশি মূল্যে পাথর আমদানি করতে হবে। এ কারণে ভুটান থেকে পাথর রপ্তানি আপাতত বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন তারা। স্থলবন্দরে পাথর না আসার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বন্দরের শ্রমিকরাও। আশা করছি শিগগির সমস্যা সমাধান হবে। এ বিষয়ে গত ৪ জানুয়ারি স্থলবন্দরের কনফারেন্স রুমে আলোচনা সভা ডেকে ছিলাম।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক রেজাউল করিম শাহিন বলেন, ফুলবাড়ী বর্ডার লোকাল ট্রাক অনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ভুটানের গাড়ি সুবিধা পোর্টালের আওতায় আনার কারণে ভুটান এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন মাল লোডিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত মৌখিকভাবে জানিয়েছে। সভায় ভ্যাট ও এ বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেখব।
বাংলাবান্ধায় লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আক্তারুল হক বলেন, আমাদের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি পাথরের ওপর নির্ভরশীল। এ বন্দরে অন্যসব পণ্য আমদানি-রপ্তানির তুলনায় পাথর আমদানিই বেশি। গত নভেম্বর থেকে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এখন তবে ভুটানের পাথর আমদানি বন্ধ হওয়ায় বন্দরটি পাথর নির্ভর হওয়ায় পাথর না আসায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ফুলবাড়িতে অনলাইন ফি নিবন্ধন চালু করার কারণে ভুটানের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। বন্দরটি পাথর আমদানি নির্ভর হওয়ায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে বন্দর দিয়ে সীমিত পরিসরে রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে।
- বিষয় :
- বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর
- আমদানি