ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

চা দোকানি থেকে ‘ফুল জুয়েল’

চা দোকানি থেকে ‘ফুল জুয়েল’

নিজের বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করছেন জুয়েল। ছবি: সমকাল

সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী (পাবনা) 

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০৪:০৫

ঈশ্বরদী বাজারে ছোট্ট একটি দোকান মাহমুদুর রহমান জুয়েলের। পাশাপাশি অল্প কিছু গোলাপ ফুল বিক্রি শুরু করেন। চাহিদা বাড়তে থাকলে ব্যবসার পরিসর বাড়ান। এক পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের আবাদ শুরু করেন। সফলতার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা পড়েছে তাঁর আসল নাম। এলাকার লোকজন এখন তাঁকে ‘ফুল জুয়েল’ নামেই ডাকেন। 

ফুল জুয়েল নামের সঙ্গে বদলে গেছে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের মাজদিয়া গ্রামের চিত্র। অর্ধশত বিড়ি শ্রমিক কাজ ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তাঁর বাগানে। বদলে গেছে তাদের জীবনযাপনের ধরন। বিড়ির কারখানায় কাজ করায় আগে ঘন ঘন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতেন। এখন আর অসুস্থ হন না। মনের আনন্দে ফুল বাগানে ফুল ফোটানোর কাজ করছেন। কেউ পরিচর্যায় ব্যস্ত, কেউবা ফুল তুলছেন। মালা গেঁথে সাজিয়ে রাখার কাজে ব্যস্ত অনেকে।  

বাগানেই কথা হয় জুয়েলের সঙ্গে। বললেন, যশোরের গদা খালী এলাকায় ফুল চাষের ব্যাপকতা দেখে ভাবি, ওরা পারলে আমি কেন পারব না। সেই থেকে শুরু। ফুলের ব্যবসা করতে এসে অনেকের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ভালোবেসে যখন কেউ ফুল জুয়েল বলে ডাকে, তখন মনটা ভরে যায়। 

পাশেই কাজ করছিলেন শ্রমিক মর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। লেখাপড়া করিনি। না বুঝে বিড়ি বাঁধার কাজ করেছি।  সারাদিনে ১৫ থেকে ২০ টাকা পেতাম। এখন জুয়েল ভাইয়ের বাগানে ফুল তুলে বাড়িতে বসে মালা গাঁথি। সংসারের অন্য কাজ করেও ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। 

শ্রমিক মালা খাতুন ও শেফালী খাতুন জানান, বিড়ি কারখানায় কাজ করার সময় অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকত। এখন ফুল নিয়ে ব্যস্ত থাকি, আয়ও হয় বেশি, শরিরেও কোনো রোগ নেই। তাদের মতো ঘরে বসে মালা গেঁথে সংসারের জন্য বাড়তি আয় করছেন বীথি খাতুন। তিনি বলেন, বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এখন ফুলের মালা গেঁথে আয় করছি। এতে স্বামী খুশি হয়, আমারও ভালো লাগে। 

যেভাবে ফুলের ব্যবসা শুরু 

সময়টা ছিল ২০০২ সাল। ঈশ্বরদী বাজারের রিকশা সমিতির মার্কেটে ছোট্ট একটি দোকান ছিল জুয়েলের। চা, বিস্কুট, শরবতের পাশাপাশি গোলাপ ফুল বিক্রি করতেন। স্থানীয়ভাবে ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন বসন্ত, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন দিবসে। বিক্রিবাট্টা ভালোই হতো। দিনে দিনে চাহিদা বাড়তে থাকে। যশোরের গদা খালী থেকে ফুল আনতে গেলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল আবাদের চিন্তা মাথায় আসে। সেই থেকে শুরু ফুলের সঙ্গে তাঁর পথচলা। 

২০১২ সালে গ্রামের ঝোপজঙ্গলে ভরা ১০ কাঠা জমি পরিষ্কার করে ফুলের আবাদ শুরু। এখন ১২ বিঘা জমিতে গোলাপ, রজনীগন্ধা, বেলী, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, চেরি, রক্তগাঁদাসহ হরেক রকম ফুলের সমাহার। এলাকার পরিবেশ পাল্টে গেছে। বাগান ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ জন নারী-পুরুষের। একজন ম্যানেজার রয়েছেন। ১২ বিঘা জমিতে ফুল আবাদ হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমির বার্ষিক খাজনা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। শ্রমিকের মজুরিসহ সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। বছরে প্রায় ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা আয় হয়। 

আরও পড়ুন

×