আদালতের রায়
দেনমোহরে মূল্যস্ফীতি, দুই লাখে বাড়তি ৬২ হাজার টাকা

ছবি: সংগৃহীত
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫ | ২৩:১২
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মিলিয়ে দেনমোহর পরিশোধের রায় দিয়েছেন কুমিল্লার পারিবারিক আদালত। ২ লাখ টাকা দেনমোহরের প্রকৃত মূল্য ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে বলেছেন।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লার পারিবারিক আদালতের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ শেখ সাদী রহমান এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১-এর সরকারি কৌঁসুলি বদিউল আলম সুজন। তিনি বলেন, ‘আদালতের এমন রায় ব্যতিক্রমী।’
জানা গেছে, ২০২২ সালে চান্দিনা উপজেলার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে বিল্লাল হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম খলিলের বিয়ে হয়। বিয়েতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা উসুল দেখান হয়। ২ লাখ টাকা বাকি রাখা হয়। ২০২৩ সালের জুনে তালাক দেন ইব্রাহিম। দেনমোহর ও ভরণপোষণ দাবি করে কুমিল্লা পারিবারিক আদালতে মামলা করেন সুমাইয়া। শুনানি শেষে গতকাল আদালত বাদীর পক্ষে এই রায় ঘোষণা করেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী আজাদ হোসেন বলেন, ওই দম্পতির বিয়ে হয়েছিল ২০২২ সালে, এখন ২০২৫ সাল। প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির কারণে টাকার মানের তারতম্য ঘটে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে স্পষ্ট। এ অবস্থায় দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৫১ ধারা প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতি অনুসারে বাদীর দেনমোহরের প্রকৃত মূল্য ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই টাকা বাদীর প্রাপ্য।
দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৫১ ধারায় বলা হয়েছে, আদালতের সহজাত ক্ষমতা। দেওয়ানি আদালত দুটি ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং আদালতের কার্যধারার অপব্যবহার রোধ করার জন্য।
ভুক্তভোগী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আদালত থেকে এমন ন্যায়বিচার পাব ভাবিনি। অনেকে বলেছিলেন, মামলা করে কী লাভ হবে? ন্যায্য পাওনা ফিরে পাবে না।’
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১-এর সরকারি কৌঁসুলি বদিউল আলম সুজন সমকালকে বলেন, ‘অবহেলিত নারী সমাজের জন্য এটাকে যুগান্তকারী রায় বলে মনে করছি। কারণ, আমাদের মুসলিম রীতিতে বিয়ে বিচ্ছেদের পর দেনমোহর নিয়ে নারীদের অনেক বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হতে হয়। আদালতেও ঘুরতে হয়। কিন্তু বিচারক বাস্তবতা উপলব্ধি করে যে রায় দিলেন, তা যুগান্তকারী।’