ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ওই দেখা যায় বিশ্বকাপ...ওই আমাদের অলিম্পিক

ওই দেখা যায় বিশ্বকাপ...ওই আমাদের অলিম্পিক

সঞ্জয় সাহা পিয়াল

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫ | ১৯:৪৮ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ | ২১:১১

আশি হাজার দর্শকে টইটম্বুর মারাকানার গ্যালারি। ম্যাচের শুরুতে সেখানে বাজছে– আমার সোনার বাংলা...আমি তোমাই ভালোবাসি। বিশ্বকাপ ফুটবলে স্বাগতিক ব্রাজিলের সামনে বাংলাদেশ। ২০২৭ সালে জুনের কোনো এক দিন বিস্ময়কর মুহূর্তটি ধরা দিতে পারে প্রত্যাশিত হয়ে। শুধু অন্যের খেলা দেখে দেখেই বিশ্বকাপের কেটে যাওয়া জীবনে একবার স্পর্শ করতে পারে লাল-সবুজের রঙ। 

দু’দিন আগেও এসব বললে হয়তো কল্পরূপ মনে হতো, কিন্তু বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা স্বপ্নের সব অনন্যতা বাস্তবরূপে বিন্যস্ত করে নিয়েছে। প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে গিয়ে বিশ্বকাপের চৌকাঠের সামনে দাঁড়িয়ে তারা। এশিয়ার সেরা বারো দলের মধ্যে থেকে অন্তত আটটি দল ব্রাজিল নারী বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাবে, বাড়াবাড়ি হবে কি ঋতুপর্ণা-আফিদাদের সেই বিশ্বকাপে ফুটবল পায়ে দেখা?

অঙ্কটা জেনে নিয়ে উত্তরটা নিজেই দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। বাহরাইন ও মিয়ানমারকে হারিয়ে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্ব থেকে মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এবার আগামী বছর মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে যাবে রুপনারা। সেখানে বারো দলের মধ্যে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশ। অসি কন্যারা খেলবে স্বাগতিক বলে। আর চীন ২০২২ সালের এএফসি ওমেন্স এশিয়ান কাপের চ্যাম্পিয়ন। রানার্সআপ জাপান। কোরিয়া তৃতীয় ছিল সেই আসরে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে এবার বাংলাদেশ। 

এখন আগামী আসরে তিনটি করে গ্রুপ হবে। সেখানে প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলটি সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পাবে। আসরের সাত এবং আট নম্বর দল দুটির জন্যও ব্রাজিলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সেক্ষেত্রে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে অফ খেলতে হবে তাদের। এই এশিয়ান কাপের সেরা আটটি দল সুযোগ পাবে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার। সব মিলিয়ে ঋতুপর্ণারাই এখন বাংলাদেশের ফুটবলে ‘স্বপ্নচারিণী’। যাদের হয়তো চিনতে পারেনি কেউ কেউ।

স্পন্সররা ছোটে না, বিজ্ঞাপনে থাকে না। বাফুফের দেওয়া মাসের বেতনটুকুর বাইরে পরিবারে একটু সচ্ছলতার জন্য তাদের তাই ছুটতে হয় মালদ্বীপ কিংবা ভুটানে লিগ খেলতে। কেননা দেশের ক্লাব ফুটবলে তাদের লিগ নিয়মিত নয়। ফুটবলকে ভালোবেসে পেশা হিসেবে নেওয়ার ঝুঁকি তাদের নিতে হয় নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই করেই। না বললে নয়, ম্যাচ না থাকলে মিডিয়াতেও তারা চাপা পড়ে থাকে ক্রিকেটের জঙ্গলে! 

এবার বোধহয় সময় এসেছে অনাদরে বেড়ে ওঠা এই স্বপ্নচারিণীদের একটু যত্ন নেওয়ার। আগামী আট মাসের মধ্যে এশিয়ার র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দলগুলোর সঙ্গে কিছু ম্যাচ আয়োজন করার। বিদেশে গিয়ে ট্রেনিং দেওয়ার এবং অতীতের ঝগড়া-বিবাদ ভুলে যে নারী ফুটবলাররা বিদ্রোহ করেছিলেন তাদের মধ্যে থেকে ফিটনেসে এগিয়ে থাকা ফুটবলারদের স্কোয়াডে নিয়ে আসার। 

এশিয়া কাপে বাকি সাত দলের মধ্যে গ্রুপগুলোতে এগিয়ে রয়েছে ভারত, চায়নিজ তাইপে, ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান, ফিলিপাইন, উত্তর কোরিয়া। এর সঙ্গে ইরান, জর্ডানেরও সম্ভাবনা আছে। তাদের সঙ্গে লড়াই করার মতো টেকনিক আর ফিটনেস রয়েছে ঋতুপর্ণাদের। কোনো সংশই নয়, তারাই পারবে বিশ্বকাপে যেতে, পারবে অলিম্পিকে পদক আনতে।

আরও পড়ুন

×