আদিবাসী ছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে খ্রিষ্টান মিশনারি ঘেরাও, বিক্ষোভ

থানা ঘেরাও। ছবি-সমকাল
কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫ | ২০:৫১ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫ | ২১:৩৪
যশোরের কেশবপুরে খ্রিষ্টান মিশনারিতে এক আদিবাসী স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় মিশনারি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ওই স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর সঠিক রহস্য উন্মোচন করার দাবি জানান। এ সময় মিশন থেকে তিন আদিবাসী ছাত্রীকে পুলিশের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মারা যাওয়া মেয়েটির বাবার দেওয়া অভিযোগ অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের আদিবাসী স্কুলছাত্রী রাজের্নং ত্রিপুরার (১৫) মরদেহ নিয়ে যায় পুলিশ। রাজের্নং কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়তেন। তার বাড়ি বান্দরবানের থানচি উপজেলার কালুপাড়া গ্রামে, বাবার নাম রমেশ ত্রিপুরা। কেশবপুর সদরের সাহাপাড়ার খ্রিষ্টান মিশনে থেকে পড়াশোনা করত রাজের্নং ত্রিপুরা।
পুলিশ বলছে, মিশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় শোয়ার ঘরের জানালার গ্রিলের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে রাজের্নং।
কেশবপুর সাহাপাড়ার খ্রিস্টান আউটরিস্ট সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ প্রকল্পের অধীনে ৪৪ আদিবাসী কিশোরী সেখানে থেকে পড়াশোনা করছে।
স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর পর অভিযোগ ওঠে, তাকে নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এর পর এ ঘটনায় সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা মিশন ঘেরাও করে। সে সময় রাজের্নং ত্রিপুরার পরিবারের সদস্যসহ অন্য তিন আদিবাসী স্কুলছাত্রীর স্বজন মিশনে হাজির হন। তাদের দাবির মুখে মিশনে থাকা অপর তিন স্কুলছাত্রীকে পুলিশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
খ্রিষ্টান মিশনারির পরিচালক খ্রিস্ফার সরকার বলেন, 'মেয়েটিকে তার শোয়ার ঘরের জানালার গ্রিলের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি।' মিশনে থাকা অন্য তিন ছাত্রীকে তাদের পরিবারের দাবি অনুযায়ী পুলিশের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
খ্রিষ্টান মিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সমন্বয়ক মো. মাশফি চৌধুরী বলেন, 'রাজের্নং ত্রিপুরার মৃত্যুর আসল রহস্য মিশনারির ফাদার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মেয়েটির মৃত্যুর পর তার অন্য সহপাঠীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অন্য ছাত্রীদের অভিভাবকরা মিশনে গেলে তাদের সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। তাই মিশনারি ঘেরাও করে প্রশাসনের সহযোগিতায় তিন ছাত্রীকে অভিভাবকদের কাছে বুঝে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।' রাজের্নং ত্রিপুরার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তিনি।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, 'মেয়েটির বাবা একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে যুক্ত করে রাখা হয়েছে।'
মনিরামপুর-কেশবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইমদাদুল হক জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মিশন ঘেরাও করে বিক্ষোভের বিষয়ে জেনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। মেয়েটির বাবার অভিযোগ অনুযায়ী বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হবে।