ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ট্রাক্টরচালক হৃদয়ের ইংরেজিতে কথা বলার ভিডিও ভাইরাল

ট্রাক্টরচালক হৃদয়ের ইংরেজিতে কথা বলার ভিডিও ভাইরাল

হৃদয় চন্দ্র রায়

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫ | ২০:৫০ | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫ | ২০:৫২

পেশায় ট্রাক্টরচালক কিন্তু কথা বলেন ইংরেজিতে। অনলাইনে ৭০ জন আর বাড়িতে ৭-৮ জনকে করান ইংরেজিতে পাঠদান। তার ইংরেজিতে তৈরি ব্লগ এখন ব্যাপক ভাইরাল। সবাই তাকে চেনেন ইংলিশম্যান নামে। বলছি দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার হৃদয় চন্দ্র রায়ের কথা। তিনি উপজেলার মুর্শিদহাট ইউনিয়নের হরিশচন্দ্রপুর সাধুপাড়া এলাকার সুধীর চন্দ্র রায়ের ছেলে তিনি। 

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির পাশের একটি রাস্তায় ট্রাক্টরের চালকের সিটে বসে ব্লগ তৈরি করছেন। কথা বলছেন ইংরেজিতে। তার ব্লগের বেশিরভাগই শিক্ষামূলক। একটি ইংরেজি বাক্যে কোথায় সাহায্যকারী ভার্ব বসবে, উচ্চারণ কেমন হবে এসব নিয়েই তার ব্লগ।
 
তার সাথে কথা বলে জানা যায়, হৃদয় ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর করোনার সময়ে অর্থাভাবে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। অভাব-অনটনে আর ভর্তি হতে পারেন নি অনার্সে। এরই মধ্যে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে বড় ভাই নয়ন চন্দ্র রায়ের সঙ্গে হাল ধরেন সংসারের। হয়ে যান ট্রাক্টর চালক। তবে পড়ালেখা বন্ধ হলেও বই-পুস্তক নিয়ে থাকেন অবসর সময়ে। বিশেষ করে ইংরেজির ওপর তার বেশ আগ্রহ। একা একাই কথা বলেন ইংরেজিতে। ইউটিউব দেখে দেখে শিখে নেন ইংরেজিতে দক্ষ হওয়ার কৌশল। হৃদয় চন্দ্র রায়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পেজ রয়েছে। যেটির নাম হৃদয় চন্দ্র। সেখানেই তিনি ইংরেজিতে কথা বলে বেশ ভাইরাল।

হৃদয়ের বন্ধু জানান, হৃদয় ট্রাকে কাজ করে এবং ইংরেজি সম্পর্কে শেখানোর চেষ্টা করে। আমি দেখেছি যে সে গবীর হলেও পড়ালেখায় বেশ আগ্রহী। ছোট থেকেই ইংরেজিতে দক্ষ। তার এলাকার ছেলে-মেয়েদেরকে ইংরেজি শেখায়। 
 
স্থানীয় মাগফুর রহমান বলেন, তার ব্যবহার খুবই ভালো। সে ইংরেজিতে কথা বলে, আমাদেরকে বেশ ভালই লাগে। সে এখন ফেসবুকে ভাইরাল। তাকে নিয়ে আমাদের গর্ব হয়। আমরা না পারলেও আমাদের এলাকার ছেলে আমাদের নাম উজ্জ্বল করেছে, এলাকার পরিচিতি বাড়িয়েছে।
 
হৃদয়ের বড় ভাই নয়ন চন্দ্র রায় বলেন, আমি ইংলিশম্যান হৃদয়ের বড়ভাই। যে একটি পজিশনে গেছে তাতে আমাকে খুব ভালো লাগে। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে এখন বেশ পরিচিত। তার একটি কর্মের ফল, তার এই সাফল্যে আমরা আনন্দিত। তার এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে। মানুষ তাকে খুব ভালোবাসে। আমাদের আর্থিক অনটনের কারণে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা দুইভাই এখন কাজ করি। সরকারের কাছে আবেদন, যদি হৃদয়ের পড়ালেখার ব্যবস্থা করে দিতে পারে তাহলে সে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে।
 
বাবা সুধীর চন্দ্র রায় বলেন, আমার ছেলেকে কষ্ট করে মানুষ করেছি। আমার আশা-আকাঙ্খা ছিল ছেলেকে পড়ালেখা করাবো। কিন্তু এইচএসসি পাশ করার পর আর সংসার চালাতে পারছিলাম না। আমার আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। পরে তাকে ট্রাক্টর চালনা শিখিয়ে দেই। এখন সে তার বড় ভাইয়ের সাথে কাজ-কর্ম করে সংসার চালাচ্ছে। তার ইংরেজিতে কথা বলার কারণে এলাকার সবাই চিনে। এখন আমাকে অনেকেই হৃদয়ের বাবা হিসেবে চেনে। এটা আমাকে খুব ভালো লাগে, আমি গর্বিত হই।

সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন নান্নু বলেন, হৃদয় আমাদের ভাতিজা ও প্রতিবেশি। হৃদয়ের ব্যাপারে অনেক শুনেছি। তার যে চর্চা তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমাদের গ্রামের উজ্জ্বল আলো হৃদয়।

আরও পড়ুন

×