ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

১২ কোটি টাকার কাজ দেখিয়ে ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ ঠিকাদারকে

সিলেট সিটি করপোরেশন

১২ কোটি টাকার কাজ দেখিয়ে ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ ঠিকাদারকে

.

 সিলেট ব্যুরো

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৫ | ০০:৫৯ | আপডেট: ০৩ মে ২০২৫ | ১২:৪৫

বাস্তবে কোনো কাজই হয়নি। কিন্তু ‘১২ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ হয়েছে’ উল্লেখ করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যসম্পাদন সনদ দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এ নিয়ে সিসিক এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগে (সওজ) আলোচনা চলছে। অভিযোগ উঠেছে, সিসিকের যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স মো. জামিল ইকবাল’ সনদটি নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে গত ২৫ মার্চ সিসিকের কাছে চিঠি দেন সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী। জবাবে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান ২০ এপ্রিল মেসার্স মো. জামিল ইকবাল ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট প্রকল্প সম্পাদন করেছে বলে জানান। জবাবের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বাস ও ট্রাক টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কার্যসম্পাদন সনদ সিসিক থেকেই দেওয়া হয়েছে। মেসার্স মো. জামিল ইকবাল নিজস্ব সিএসআর ফান্ড (সামাজিক দায়বদ্ধতা) থেকে কাজটি করেছে। প্রকল্পে অটোমেটেড ওয়েব বেজড টোল কালেকশন খাতে ৯ কোটি টাকা, ট্রাফিক অ্যান্ড টার্মিনাল অপারেশন্স খাতে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, এনহ্যান্সড সার্ভিলেন্স মনিটরিং খাতে ৮০ লাখ টাকা ও ফিচার্স ফর দ্য টোল কালেকশন সিস্টেম খাতে ১ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়।
জানা গেছে, সিলেট বিভাগের ছয়টি কম্পিউটারাইজড টোল প্লাজা ব্যবস্থাপনার জন্য গত বছর দরপত্র আহ্বান করে সওজ। প্রতিটি টোল প্লাজার বিপরীতে ছয় থেকে ১৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। বর্তমানে তা মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে। এ কাজ শেষ হলে কার্যাদেশ পাবে দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। 

সওজ সূত্র জানায়, দরপত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কার্যসম্পাদন সনদপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে মেসার্স মো. জামিল ইকবাল একাধিক দরপত্রের সঙ্গে ‘রিয়েল টাইম কাস্টমাইজড সফটওয়্যার বেজড কম্পিউটারাইজড টোল কালেকশন’-এর অভিজ্ঞতা হিসেবে সিসিকের অভিজ্ঞতা সনদ জমা দেয়। সনদটি ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দেওয়া। কিন্তু প্রতিষ্ঠানকে সিসিক ট্রাক ও বাস টার্মিনালের কম্পিউটারাইজ টোল আদায় কাজের যে সনদপত্র দিয়েছে, বাস্তবে সে রকমের কোনো কাজ সেখানে হয়নি। ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণাধীন। অন্যদিকে, বাস টার্মিনালে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সমকালকে বলেন, তৎকালীন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সময়ে মেসার্স মো. জামিল ইকবালের সঙ্গে সিসিকের একটি চুক্তি হয়েছিল। ওই চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বাস ও ট্রাক টার্মিনালের টোল আদায়ে অটোমেশন পদ্ধতি, ওয়েব্রিজের ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছে। মূলত তারা একটি জরিপের কাজ করেছে। সেখানে সিসিকের টাকা খরচ হয়নি, তারা নিজেদের খরচে করেছে। তবে জরিপ আর কার্যসম্পাদন এক বিষয় কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই সময় প্রতিষ্ঠানকে কার্যসম্পাদন সনদপত্র দেওয়া হয়েছিল।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী জামিল ইকবাল বিদেশে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানিয়েছেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র নিয়ে সন্দেহ হলে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি পাঠাবে মূল্যায়ন কমিটি। পরবর্তী সময়ে ওই কমিটিই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।

আরও পড়ুন

×