বিশ্বম্ভরপুরে ইউএনওকে নিয়ে দুপক্ষ মারমুখী

দুপক্ষের মারমুখী অবস্থান
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫ | ২০:৫৫ | আপডেট: ০৪ মে ২০২৫ | ২১:০৩
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মফিজুর রহমানকে নিয়ে দুপক্ষের মারমুখী অবস্থান দেখা গেছে। আজ রোববার উপজেলা সদরে মানববন্ধন, মিছিল, ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া এবং পাল্টা মানববন্ধন হয়েছে।
সকাল ১১টায় প্রথমে সচেতন উপজেলাবাসীর ব্যানারে কারেন্টের বাজারের বোয়াল চত্বরে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো অবহেলায় নষ্ট হয়েছে। মেরামতের কথা বললে ইউএনও বাজেট স্বল্পতার কথা জানান। অথচ, তার বাসভবনে ডাইনিং কক্ষ নির্মাণ হয়েছে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে। বাসভবনে পুকুর ঘাট তৈরিতে সাত লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। তাঁর অফিসে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে খাস কামরা তৈরি করেছেন। এগুলোসহ নানা প্রকল্প থেকে ইউএনও টাকা আত্মসাত করেছেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মো. শফিকুল ইসলাম জনি, মো. ওয়াদুদ, মো. শাহীন আহমদ, মো. আব্দুর রউফ, মো. নুরুল আলম সাগর ও মো. হাবিবুর রহমান।
শফিকুল ইসলাম জনি বলেন, ‘সীমান্তে চোরাচালানে ইউএনওর আস্কারা আছে। তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। তার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব যাচাই করলে অসংলগ্ন লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যাবে।’
কারেন্টের বাজারে মানববন্ধন শেষে মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে যাচ্ছিলেন নাগরিকরা। পথে মাল্টিপারপাস সেন্টারের সামনে তাদের বাধা দেয় বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া, পালটা-ধাওয়া এবং হামলা হয়। সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে এসে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে হামলাকারীরা।
এ দিকে বিকেলে উপজেলা সদরের বিপ্লবী চত্ত্বরে বিশ্বম্ভরপুর সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে পাল্টা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা হয়। উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন- শ্রমিক দলের মো. আবুল কালাম, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী শাহ্ রাকিব প্রমুখ।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রাজু আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসররা বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে উপজেলা সদরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। বিএনপি কর্মীরা তাতে বাধা দেন। এ সময় হাতাহাতি হয়েছে। উপজেলা পরিষদ, থানায় যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়, সেজন্য বিএনপি কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেছে।’
ইউএনও মো. মফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়নি। বরং নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র করছি আমরা। হাওর বিলাসকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। সম্প্রতি মাল্টিপারপাস সেন্টার ইজারা দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ দরদাতা ইজারা পেয়েছেন। এ নিয়ে সংক্ষুব্ধ কিছু ব্যক্তি বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করেছে।’
এদিকে মানববন্ধনে হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ বিকেলে সুনামগঞ্জ শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক ইমনদ্দোজা ইমন এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শফিকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। ডিসি মহোদয়ের কাছেও উনার বিরুদ্ধে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছিলাম।’
বক্তারা আর বলেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ছাত্র-জনতার ব্যানারে ইউএনওকে অপসারণের দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপি নামধারীরা হামলা করে ছাত্রদের আহত করেছে। আমরা কি নৈতিক দাবি নিয়ে একটা আন্দোলন করতে পারি না? হামলাকারীদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং এসপি মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যুব কল্যাণের সভাপতি শফিকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সদস্যসচিব মেহেদী হাসান সাকিব, যুগ্ম আহ্বায়ক জিহান জুবায়ের, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র মো. ইলিয়াস, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোবারক হোসেন, আহত শামিম আহমেদ, গণঅধিকার পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক তিমন চৌধুরী প্রমুখ।
- বিষয় :
- সুনামগঞ্জ
- অর্থ আত্মসাৎ
- বিএনপি