স্বামী হারিয়ে ২ সন্তান নিয়ে অসহায় গৃহিণী

বানিয়াচংয়ে বজ্রপাতে নিহত কৃষক দুর্ব্বাশ কান্তি দাসের ছবি হাতে স্ত্রী ও দুই সন্তান সমকাল
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫ | ২৩:২০
সারাদেশে বজ্রপাতের যেসব হটস্পট রয়েছে এর মধ্যে হবিগঞ্জ অন্যতম। বৃষ্টি এলেই শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। মুহূর্তেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে আকাশ। বিদ্যুৎ চমকালেই দেখা দেয় আকস্মিক বজ্রপাত। এতে মুহূর্তেই ঘটে কৃষক ও শ্রমিকের প্রাণহানি।
হবিগঞ্জে চলতি মৌসুমে বজ্রঘাতে মারা গেছেন ৬ জন কৃষক ও শ্রমিক। আহত হয়েছেন ৩ জন। এদিকে, বজ্রপাতে নিহত স্বামীকে হারিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে যোগমায়া দাসের। ২ শিশু সন্তান নিয়ে কীভাবে সংসার চালাবেন এখন সেই চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, ২৮ এপ্রিল গ্রামের হাওরে ধান কাটায় ব্যস্ত ছিলেন বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন আড়িয়ামুগুর গ্রামের ৪ ভাই। তখনই বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া, আকস্মিক বজ্রপাত। ভয়ে ৪ ভাই একত্রে বসেন। এ সময় বজ্রাঘাতে মারা যান দুর্ব্বাশ কান্তি দাস। এতে আহত হন তাঁর ৩ সহোদর সুধন্য দাস, ভূষণ দাস ও মোহন লাল দাস। বজ্রপাতে আহত হয়ে মাঠেই পড়ে থাকেন তারা। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বজ্রপাতে দুর্ব্বাশ দাসের মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে তাঁর পরিবার। ৫ বছরের ছেলে প্লাবন ও আড়াই বছরের কন্যাসন্তান লাবনী দাসকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। স্বামীর ঋণ পরিশোধ এবং সংসার কীভাবে চালাবেন এটি এখন চিন্তার বিষয়।
দুর্ব্বাশ দাসের স্ত্রী যোগমায়া দাস বলেন, মাঠে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান তাঁর স্বামী। তিনি মারা যাওয়ার আগে অনেক টাকা ঋণ করে টিনশেড ঘর নির্মাণ করেছিলেন।
বর্ষা মৌসুমে বাড়ির পাশের অংশ ভেঙে যায়। এবার যদি ভেঙে পড়ে কীভাবে মেরামত করবেন সেটিও বুঝতে পারছেন না।
বজ্রপাতে নিহত দুর্ব্বাশ দাসের সহোদর ভূষণ দাস বলেন, চার ভাই একসঙ্গে মাঠে কাজ করছিলেন। বজ্রপাত শুরু হলে পাশেই ছোট ভাই দুর্ব্বাশ মারা যান। নিজেও আহত হয়েছেন। টাকার জন্য চিকিৎসা করতে পারছেন না। সুধন্য দাস বলেন, তাঁর পাশে থাকা দুর্ব্বাশ দাসের ওপর সরাসরি বজ্রাঘাত হয়। বাকিরা একেক দিকে ছিটকে পড়েন। হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস জানায়, বৈশাখ মাস শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত জেলায় দুর্ব্বাশ দাস ছাড়াও আরও ৫ কৃষক ও শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাদের রহমান বলেন, বজ্রপাতে নিহতদের এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। হাওর এলাকা মনিটরিংয়ের পাশপাশি বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় আশ্রয়ণ ছাউনি ও বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড.ফরিদুর রহমান জানান, হবিগঞ্জে বজ্রপাতে প্রায়ই কৃষক ও শ্রমিক মারা যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় বজ্রনিরোধক দণ্ড ও আশ্রয়ণকেন্দ্র স্থাপনে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
- বিষয় :
- অসহায় পরিবার