জমি দখল উচ্ছেদ অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা

আড়াইহাজারের গহরদী এলাকায় ভাঙচুর করা পপকন বিক্রেতা মৃত বিল্লাল হোসেনের বাড়ি সমকাল
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫ | ০০:৫৫
আড়াইহাজারে প্রতারণার মাধ্যমে জমি দখল, উচ্ছেদ ও অপমান করায় এক ব্যক্তি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত শনিবার রাতে উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের গহরদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী বিল্লাল হোসেন (৪৫) ছিলেন এ এলাকার একজন পপকর্ন বিক্রেতা।
এ ব্যাপারে রোববার বিকেলে ছয়জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে অভিযুক্ত করে বিল্লালের স্ত্রী জামেলা আক্তার আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আড়াইহাজার থানার ওসি জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জামেলা আক্তার জানান, তাঁর স্বামী পৈতৃক সূত্রে পাওয়া এক শতাংশ জমিতে ঘর তুলে বসবাস করতেন। সারাদিন ভ্যান নিয়ে ফেরি করে পপকর্ন বিক্রির আয় দিয়ে কোনো রকমে পাঁচজনের পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতেন তিনি। তাঁর এই জমিতে পাশের বাড়ির আমেরিকা প্রবাসী আলমগীর হোসেনের নজর পড়ে। তিনি এই এক শতাংশের পরিবর্তে বাড়ির কিছু দূরে দুই শতাংশ জমি দেওয়ার কথা বলে বিল্লালকে পৈতৃক বাড়ি থেকে সরে যেতে চাপ দেন। এতে কাজ না হওয়ায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ে আলমগীর আট বছর আগে বিল্লালকে তাঁর পৈতৃক ভিটা থেকে উচ্ছেদ করেন। তখন থেকে আলমগীরের দেওয়া দুই শতাংশ জমিতে টিনের ঘর করে বাস করতে থাকেন বিল্লাল। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি করতে অনীহা প্রকাশ করেন আলমগীর। বেশ কিছু দিন ধরে বিল্লালকে তাঁর এক শতাংশ জমিতে ফেরত যাওয়ার জন্য চাপ দেন আলমগীর ও তাঁর লোকজন। বিল্লাল তাদের জানান, কয়েক লাখ টাকা ধারদেনা নিয়ে বালু ভরাট করে টিনের একটি ঘর করেছেন। এখন সংসারই চলে না। তাই তাঁর এক শতাংশ জমিতে ঘর করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন বিল্লাল। আলমগীরের লোকজন এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিল্লালকে বাড়ি ছাড়ার জন্য শারীরিক মানসিক নির্যাতন শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার গহরদী গ্রামের আবুল খায়েরসহ আলমগীরের লোকজন বিল্লালের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট করে।
জামেলা জানান, তিনি ও তাঁর স্বামী বিষয়টি মীমাংসার জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের শরণাপন্ন হলে গত শনিবার হামলাকারীরা তাদের এলাকা থেকে চলে যাওয়ার জন্য বিল্লালকে অপমান অপদস্থসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বিল্লাল এ অপমান সহ্য করতে না পেরে ওই দিন বিকেলের দিকে কীটনাশক পান করেন। পরিবারের লোকজন তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। বিল্লালের আশঙ্কাজনক অবস্থা দেখে সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওই রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আলমগীরের পক্ষের লোক আবুল খায়ের। তিনি জানান, জমিজমার বিষয়ে বিল্লালের সঙ্গে আগেই মীমাংসা হয়ে গেছে। স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে বিল্লাল আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে দাবি তাঁর।
আড়াইহাজার থানার ওসি খন্দকার নাসিরউদ্দিন জানান, ভুক্তভোগী বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আরও তথ্য চেয়ে খবর দেওয়া হয়েছে। বিল্লালের স্ত্রী এলে মামলা নেওয়া হবে। পরে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- আত্মহত্যা