ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রাম

বসানো হলো ১৭৪ হাইড্রেন্ট, পানি মেলে না একটিতেও

বসানো হলো ১৭৪ হাইড্রেন্ট, পানি মেলে না একটিতেও

চট্টগ্রাম নগরীর চৌমুহনী মোড়ে স্থাপন করা ফায়ার হাইড্রেন্ট- সমকাল

 আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫ | ০০:৪৯ | আপডেট: ১৪ মে ২০২৫ | ০৭:০২

সহজেই আগুন নেভাতে চট্টগ্রাম মহানগরে বসানো ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহারের আগেই অচল হয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে গিয়ে বিভিন্ন সময় হাইড্রেন্ট ব্যবহারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এগুলোতে পানি পাওয়া যায়নি এক দিনও। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আলোচনা না করে অপরিকল্পিতভাবে ওয়াসা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নগরীতে পুকুর কিংবা পানির পর্যাপ্ত রিজার্ভার না থাকায় আগুন নেভাতে গিয়ে পানি সংকটে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। সহজে পানি পেতে ফায়ার সার্ভিসের জন্য ৪ কোটি ১০ লাখ টাকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ১৭৪টি পয়েন্টে হাইড্রেন্ট (চাপকলের মতো যন্ত্র) বসানো হলেও কারিগরি এবং পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে ‘অকেজো’ প্রকল্পে পরিণত হয়েছে এটি। এতে মিলছে না পানি, নেই সংযোগ লাইন। 

সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে একটি ভবনের তিনতলায় খেলনার গুদামে আগুন লাগে। পানি সংকটের কারণে আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। হাইড্রেন্টে চেষ্টা করেও পানি পাওয়া যায়নি। 

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, হাইড্রেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে পৃথক একটি লে-আউটের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। হাইড্রেন্টের পানির লাইন ওয়াসার বাসাবাড়িতে সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত মূল পানির লাইনের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ রকম ব্যবস্থা পৃথিবীর কোথাও নেই। এ ছাড়া পানির চাপের পরিমাণ নিয়েও সমস্যা আছে। হাইড্রেন্টের চাপ ৫ বার, ৬ বার, ৭ বার থাকার কথা থাকলেও লাইনে রাখা হয় ১ দশমিক ৫ বার। অতিরিক্ত চাপ দিলে ওয়াসার অলিগলির লাইন ফেটে যাবে। হাইড্রেন্টগুলোর মুখে হোসপাইপ লাগানোর জন্য ‘প্যাচ সিস্টেম কাপলিং’ করা হয়েছে। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের হোসপাইপের কাপলিং লক সিস্টেমের। ওয়াসা পুরো শহরে পানি সরবরাহে রেশনিং করে। তাই সবসময় সারা শহরে ওয়াসার লাইনে পানি থাকে না। আগুন যেখানে লাগে সেখানের লাইনে পানি না থাকলে হাইড্রেন্ট ব্যবহার করার সুযোগ নেই। এত ত্রুটি নিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এটি শহরের মানুষের কোনো কাজেই আসছে না। 

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা বেশি। অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে মাঝেমধ্যেই। ওয়াসার হাইড্রেন্ট প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ভালো ছিল। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে সরকারের অর্থ অপচয় হতো না।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম নগরের হাইড্রেন্ট প্রকল্পটি পুরোপুরি অকেজো। এ প্রকল্পের পদে পদে গলদ। তারা এক দিনও হাইড্রেন্ট থেকে পানি পাননি। এগুলো কখনও ব্যবহার করা যাবে না।  

তবে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, দেশের মধ্যে চট্টগ্রামে প্রথম আগুন নেভাতে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়। এগুলো বসানোর সময় বিভিন্ন দেশের হাইড্রেন্টের নমুনা নিয়ে তার আলোকেই কাজ করা হয়। হাইড্রেন্ট ব্যবহারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে অনেক সভাও করেছি। ফায়ার সার্ভিস কেন ব্যবহার করছে না, তা জানা নেই। কারিগরি যেসব ছোটখাটো ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে তা ফায়ার সার্ভিস চাইলে নিজেরাই সমাধান করতে পারে।

২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৭৪টি হাইড্রেন্ট বসানো হয়। প্রতি বছরই নগরে অগ্নিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় মানুষেরও প্রাণহানি হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে, চট্টগ্রাম জেলায় গত পাঁচ বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭ হাজার ৪১৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। পানির উৎসের অভাবে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। 

আরও পড়ুন

×