বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাস রাঙিয়েছে বুনোফল ‘ফলসা’

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট ছোট হলুদ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘ফলসা’ গাছ। বিলুপ্তপ্রায় এ গাছে এখন ফুল ফোটার মৌসুম। কিছু ডালে এসেছে ফল সমকাল
স্বপন চৌধুরী, রংপুর
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫ | ০১:১৬ | আপডেট: ১৮ মে ২০২৫ | ০৭:২৭
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) মূল ফটকের রাস্তা ধরে সোজা পশ্চিম দিকে এগোলে কেন্দ্রীয় মসজিদ চোখে পড়ে। মসজিদ ডান দিকে রেখে আর কিছুদূর পর রাস্তাটি শেষ হয়েছে পরিবহন পুলে গিয়ে। সেখানে উত্তর দেয়ালের পাশে ছোট ছোট হলুদ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘ফলসা’ গাছ। বিলুপ্তপ্রায় এ গাছে এখন ফুল ফোটার মৌসুম। কিছু ডালে এসেছে ফল। ফলসার ফল-ফুল দেখতে ভিড় করছেন প্রকৃতিপ্রেমী শিক্ষার্থীরা।
ফলসা মূলত মাঝারি আকারের পাতাঝরা গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটি ছয় থেকে সাত মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ফলসা বাংলাদেশে স্বল্প পরিচিত একটি সাধারণ ফল। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এর বাণিজ্যিক চাষ হয়। ফলসার আদিনিবাস এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে। হিমালয়ের পাদদেশে এটি ভালো জন্মে।
বাংলাদেশের গ্রামে একসময় অহরহ দেখা গেলেও ইদানীং দুর্লভ হয়ে উঠেছে ফলসা। কয়েক দশক আগেও পথের ধারে বা পতিত জায়গায় আপনাআপনিই জন্মাত। প্রকৃতিতে বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। কারণ, এই ফল পাখিদেরও খুব প্রিয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় এখনও অল্পস্বল্প চোখে পড়ে। বেরোবি ক্যাম্পাসে ফলসা গাছ রয়েছে দুটি। আরেকটি ক্যাম্পাসের মিডিয়া চত্বরে।
ফলসার বৈজ্ঞানিক নাম Grewia asiatica। এর পাতা ডিম্বাকার, খসখসে, রোমশ ও কিনারা দাঁতানো। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হালকা হলদে রঙের ফুল ফোটে মার্চ-এপ্রিলে। ফল পাকে মে ও জুন মাসে। দেখতে মটরদানার মতো, গোলাকার। কাঁচা রং সবুজ, স্বাদে টক। পাকলে কালচে বাদামি রঙের মনলোভা রূপ ধারণ করে। খেতে টক-মিষ্টি স্বাদের। গাছের বাকল লম্বা, আঁশযুক্ত ও ধূসর বর্ণের। ফলসা তাজা ফল হিসেবে খাওয়া হয়। পাকা ফলসা দিয়ে নানা রকম কোমল পানীয়, শরবত ও জুস তৈরি করা যায়। এই ফলের রস থেকে সিরাপ তৈরি হয়ে থাকে। পাকা ফলসা স্বাদে টক-মিষ্টি কিন্তু ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’র ভালো উৎস। আরও রয়েছে প্রোটিন, শর্করা, খনিজ পদার্থ, চর্বি, ক্যালসিয়াম ও আয়রন।
বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না জানান, ফলসা গাছ তেমন বড় হয় না। খাটো আকৃতির পাতাঝরা স্বভাবের ঝোপালো বৃক্ষ এটি। প্রধান কাণ্ড থেকে ডালপালা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। কাঁচা ফলের রং সবুজ ও স্বাদে টক। পাকলে লাল ও শেষে কালচে বাদামি হয়ে যায়। পাকা ফলের স্বাদ টক-মিষ্টি তবে সুস্বাদু। ঔষধি গাছ হিসেবেও ফলসার গুরুত্ব অনেক।
বেরোবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌখিন আলোকচিত্রী ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, ক্যাম্পাসে তৃতীয়বারের মতো ফলসা গাছে ফল এসেছে। ক্যাম্পাসের মিডিয়া চত্বরে আরেকটি গাছ আছে। সেটিতে এখনও ফুলের দেখা মেলেনি। আশা করছি আগামী মৌসুমে ফুল ও ফল আসবে।
- বিষয় :
- ফুল চাষ