১৫ বছর পর চবি চারুকলা ইনস্টিটিউট ফিরছে মূল ক্যাম্পাসে

মঙ্গলবার সকাল থেকেই নগরীর মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে আসবাবপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়
চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫ | ০৫:১০
আড়াই বছরের আন্দোলন ও অনশন শেষে মূল ক্যাম্পাসে ফিরছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউট। বৃহস্পতিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে ক্লাস শুরু করবেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ১৫ বছর পর ক্যাম্পাসে চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই নগরীর মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে আসবাবপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরাও এই আসবাবপত্র গোছানোর কাজে অংশ নেন। ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।
চারুকলার স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম সমকালকে বলেন, অনেক কষ্ট, আন্দোলন, অনশন করেছি আমরা। এখন আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হলো। একটি ট্রাক ও তিনটি পিকআপ ভ্যানে মালামাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আবদুল করিম ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায়। সেখানেই ইনস্টিটিউটের নতুন ক্লাসরুম ও অফিস কক্ষ স্থাপন করা হচ্ছে।
চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া সমকালকে বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। আজকের এই দিনটি চারুকলার ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান সমকালকে বলেন, সিন্ডিকেট মিটিংয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে সমাবর্তনের প্রস্তুতির কারণে তখন স্থানান্তর সম্ভব হয়নি। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এর আগে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবিতে ২০২২ সাল থেকে কয়েক দফা আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ গত ২১ এপ্রিল এই দাবিতে ৯ শিক্ষার্থী অনশনেও বসেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ৩৪ ঘণ্টা পর তারা অনশন প্রত্যাহার করেন।
চারুকলা আন্দোলনের শুরু যেভাবে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের যাত্রা ১৯৭০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। এরপর ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক করে গঠন করা হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীর মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে এখন এর অবস্থান। প্রায় ১৫ বছর ধরে ইনস্টিটিউটটি সেখানেই পরিচালিত হয়ে আসছে। দুর্বল অবকাঠামো, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং মূল ক্যাম্পাস থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন।
২০২২ সালের ২ নভেম্বর শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পর ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস বর্জনের পাশাপাশি তারা ধারাবাহিকভাবে নানা কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এরপর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চলে।
২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে চারুকলা ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের ১০০তম দিনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা ও হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর সেশনজট কমাতে ক্লাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। এসময়ও মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ডিসেম্বরে আবারও আন্দোলন নামেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। ১২ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের মার্চের মধ্যেই চারুকলা ইনস্টিটিউট বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান। তবে এই প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখায় ২১ এপ্রিল থেকে আবারও আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এরপরই ৩৪ ঘণ্টা অনশনের পর জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফেরানোর সিদ্ধান্ত হয়।
- বিষয় :
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়