ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

হঠাৎ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে স্থবির জনজীবন

হঠাৎ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে স্থবির জনজীবন

প্রতীকী ছবি

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫ | ০৩:১৮

বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে নাসিরনগর। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার ১২৮ গ্রাম বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি। এ কারণে দাপ্তরিক কাজকর্ম ও জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার বিকেলে আকাশে সামান্য মেঘ দেখা যায়। এর পর উপজেলা সদর ছাড়া প্রায় ১২০টি গ্রাম বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। রাত ১১টার দিকে উপজেলা সদরের বিদ্যুৎও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাত পেরিয়ে সকাল, এর পর বিকেল হলেও বিদ্যুৎ আর আসেনি। কখন আসবে, সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না তারা।

উপজেলা সদরের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, কম্পিউটার চালু না থাকায় কাজ বন্ধ। ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেবাকেন্দ্রগুলো বন্ধ। অফিসগুলোতে কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা নাসরিন বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় অফিসে কোনো কাজই করতে পারছি না। চরম হতাশা কাজ করছে। বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।’

জানা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া, ফ্যান চালানো, খাবার সংরক্ষণ– সবকিছু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলাবাসী। গোকর্ণ ইউনিয়নের গৃহবধূ মমতা আক্তার জানান, বাচ্চা ঘুমাতে পারে না। ঘরে গরমে দম বন্ধ হয়ে আসে। দুই দিন ধরে তাদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই।

চাতলপাড়ের বাসিন্দা মীর আবুল আনসারির দাবি, দুই দিন ধরে তাদের ইউনিয়ন বিদ্যুৎহীন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, কিছু দিন ধরে আকাশে সামান্য মেঘ করলেই বিদ্যুৎ থাকে না। গত ২০ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েছে শিশু শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় হাটবাজারের দোকানিরা জানিয়েছেন, ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংস নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ কেউ ক্ষতিপূরণও চাচ্ছেন। তাদের দাবি, কোনো নোটিশ না দিয়ে দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার কারণ জানাতে হবে। না হলে সবার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সেবাপ্রত্যাশীরা বারান্দায় ঘোরাফেরা করছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকে চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতালের এক নার্স বলেন, ‘২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় স্যালাইন পাম্প, অক্সিজেন সাপোর্ট সব ঝুঁকিতে।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) প্রকৌশলী আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, গত বুধবার রাতে নাসিরনগর বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। তাদের টেকনিক্যাল টিম রাতেই কাজ শুরু করেছে। যেহেতু বর্ষার পানি চলে এসেছে এবং এলাকাটি হাওরবেষ্টিত, তাই একটু বেশি সময় লাগছে।

তাঁর কথার সঙ্গে একমত নন নাগরিক অধিকারকর্মীরা। তাদের দাবি, ট্রান্সফরমার পুরোনো, লাইন রক্ষণাবেক্ষণে নেই জরুরি পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থা। প্রতিবারই ভেঙে পড়ে পুরো ব্যবস্থা। এটা কোনো আধুনিক ব্যবস্থা হতে পারে না; বললেন স্থানীয় সাংবাদিক শামীম ভূঁইয়া। 

আরও পড়ুন

×