দুই মাসের বেতনের জন্য সাত মাস আন্দোলন

মাহমুদ জিন্সের তিন শতাধিক সাবেক শ্রমিকের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায়
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫ | ২২:২৫
গত বছরের নভেম্বরে বন্ধ হওয়া একটি কারখানার কয়েকশ শ্রমিক গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বকেয়া বেতনের জন্য মহাসড়কে নেমেছিলেন। তাদের সরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়ে লাঠিপেটা করেছে শিল্পপুলিশ। এ সময় পাল্টা ইট-পাটকেল ছোড়েন বিক্ষোভকারীরা। পরে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শুক্রবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদিন অন্তত ১০ শ্রমিক পুলিশের লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হয়েছেন।
শ্রমিকরা জানান, দুই মাসের বকেয়া বেতন রেখেই ওই এলাকার মাহমুদ জিনসের কারখানাটি গত বছরের ৯ নভেম্বর বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বারবার নোটিশ দিয়ে বেতন পরিশোধের তারিখ দিলেও তাদের পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। অনেকেই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কাজ নিয়েছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ধরে প্রতি মাসেই দু-তিনবার মহাসড়ক অবরোধ করে বকেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিন শতাধিক শ্রমিক চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কের ঢাকামুখী লেনে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। সংবাদ পেয়ে সেখানে যান শিল্পপুলিশের সদস্যরা। তারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। দুপুরের দিকে তাদের সরিয়ে দিতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া শুরু হয়। ক্ষিপ্ত শ্রমিকরাও পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। সেখানে অন্তত ১০ শ্রমিক আহত হন। অন্য শ্রমিকরা তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় কয়েকটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেন।
মামলায় আসামি হওয়ার ভয়ে বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য, অতীতে যে শ্রমিকরা গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তারা প্রতি মাসেই বকেয়ার জন্য বিক্ষোভ করে আসছেন। পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা প্রতিবারই তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেন। পাওনা পরিশোধের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মালিকপক্ষ তাদের কাছে একের পর এক তারিখ দিলেও সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি। সর্বশেষ ১৫ মে বকেয়া বেতন পরিশোধের কথা দিয়েছিল তারা। সেদিনও টাকা পাননি।
এলাকাবাসী জানায়, ২২ মে রাতে কারখানার সামনে শ্রমিকদের উপস্থিত থাকতে উপজেলার কয়েকটি এলাকায় মাইকিং করা হয়। এ ঘোষণার পর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে তিন শতাধিক সাবেক শ্রমিক ওই কারখানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে ১০টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এ ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ বলেন, সকালে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করলে সেখান থেকে সরে যেতে বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু শ্রমিকরা পুলিশের ওপর চড়াও হলে তাদের লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।