ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

প্রকৃতি

লাল সোনাইলের গোলাপি আভা

লাল সোনাইলের গোলাপি আভা

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী শহীদ মিনারের পেছনের গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল সোনাইল। সম্প্রতি তোলা সমকাল

স্বপন চৌধুরী, রংপুর

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫ | ০১:১৩ | আপডেট: ২৭ মে ২০২৫ | ১০:১২

সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে আছে গোলাপি ও গাঢ় লাল রঙের ফুল। লাল সোনাইল বা লাল সোনালু বলা হলেও এ ফুলে গোলাপি রঙের আভাই বেশি। নান্দনিক সৌন্দর্যের ফুলগুলো ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। পথচারীরা এক মুহূর্তের জন্য হলেও থমকে দাঁড়ান আর উপভোগ করেন এর অপরূপ সৌন্দর্য।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অস্থায়ী শহীদ মিনারের পেছনের গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল সোনাইল। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা প্রতিনিয়ত লাল সোনাইল দেখতে ভিড় করছেন, ছবি তুলে রাখছেন দুর্লভ এই ফুলের।

বেরোবি ক্যাম্পাসজুড়েই গাছে গাছে ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, স্বর্ণচাঁপা, কনকচাঁপা, নীলমণিসহ নানা জাতের ফুল। তবে এত সবের পরও লাল সোনাইল নজর কাড়ছে সবার। দেশে দুর্লভ ফুলের মধ্যে একটি হলো লাল সোনাইল বা লাল সোনালু। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া জাভানিকা। এটি একটি উষ্ণমণ্ডলীয় ফুল। জাভা ক্যাসিয়া বা গোলাপি ঝরনা নামেও পরিচিত এটি।

 বাংলা একাডেমির সহপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না জানান, বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে লাল সোনাইলের ফুল ফোটে। তবে বিভিন্ন দেশে জলবায়ুভেদে এর ফুল ফোটার সময় ভিন্ন হয়ে থাকে। এই ফুলের আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। পৃথিবীতে উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের বাগানে উদ্ভিদ হিসেবে এর জন্ম। বাংলাদেশের সব জায়গায় এই ফুল দেখা না গেলেও পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়। দ্রুত বর্ধনশীল ও মাঝারি আকৃতির এ গাছ ৮ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়।

তিনি আরও জানান, সৌন্দর্যের পাশাপাশি নানা ভেষজ উপকারিতা আছে লাল সোনাইলের। কোষ্ঠকাঠিন্য, কোলিক, ক্লোরোসিসের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো প্রাচীনকাল থেকেই। উদ্ভিদটির পাতা হারপিস সিমপ্লেক্সের (ভাইরাল সংক্রমণ) বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এর ছাল বা বাকল আয়ুর্বেদিক ও অন্য ঐতিহ্যগত ওষুধের অ্যান্টিডায়াবেটিক ফর্মুলেশনের অন্যতম উপাদান।

বেরোবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও উদ্ভিদপ্রেমী ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ক্যাম্পাসে চার শতাধিক প্রজাতির প্রায় ৩৭ হাজার গাছ লাগিয়েছি। এই গাছগুলো সংগ্রহে বিভিন্ন জন সহযোগিতা করেছেন। কেউ গাছ কিনে দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা গাছের পরিচর্যা করে সহযোগিতা করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব দুর্লভ গাছের চারা লাগানো হয়েছে, সেগুলো সংগ্রহ করতে সহযোগিতা করেছেন নিসর্গবিদ মোকারম হোসেন। তিনি অনেক দুর্লভ গাছের চারা সংগ্রহ করে দিয়েছেন, তার মধ্যে একটি হচ্ছে লাল সোনাইল। ক্যাম্পাসে লাগানো তিনটি লাল সোনাইল গাছের মধ্যে দুটিতে ফুল ফুটেছে।

তিনি জানান, এই লাল সোনাইল ফুল অন্যরকম হওয়ায় এর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা হয়। গাছটির চারদিকে লম্বা ডাল ছড়িয়ে যায়, ডালের ওপর বরাবর ফুল ফুটে থাকে। দেখে মনে হয়, কেউ একের পর এক সাজিয়ে দিয়েছে ফুলগুলো।

লাল সোনাইলের বংশবৃদ্ধির বিষয়ে ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, এই ফুলকে লাল সোনাইল বলছি ঠিকই, কিন্তু ফুলটার মধ্যে গোলাপি রঙের আভাই বেশি। রংপুরে যেহেতু ভালো ফুল হচ্ছে, তাই বোঝা যাচ্ছে গাছটি এখানকার মাটি ও আবহাওয়া দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছে। বীজ থেকে এই গাছ উৎপাদন করা যায়। আমরা ভেবেছি, এবার যদি বীজ পাই, তাহলে অনেক মানুষের কাছে বিতরণ করব। যাতে ছড়িয়ে পড়ে দুর্লভ এই লাল সোনাইল।

আরও পড়ুন

×