ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মন ছুঁয়ে যায় মাধবীলতায়

মন ছুঁয়ে যায়  মাধবীলতায়

নারায়ণগঞ্জের ইনডেক্স হাউজিংয়ে বেয়ে ওঠা মাধবীলতা গাছ। সম্প্রতি শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে সমকাল

শরীফ উদ্দিন সবুজ, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫ | ২৩:২৮

বছর দশেক আগের কথা। নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মঈনুদ্দিন আহমেদ মিঠু ঢাকা থেকে ফিরছিলেন। রাস্তায় দেখলেন, একটি বাড়ি ভরে আছে মাধবীলতায়। সেই বাড়ির সামনে গাড়ি থামালেন মনের অজান্তেই। বাড়ির মালিকের কাছ থেকে একটি চারা চেয়ে নিলেন। সেই চারা রোপণ করলেন নিজ বাড়ির সামনে। ৯ তলা ভবন বেয়ে ধীরে ধীরে উঠতে লাগল গাছটি। প্রথমবার ফুল ফোটা শুরু হতেই ভবনের সব বাসিন্দার মন জয় করে নিল মাধবীলতা।
মঈনুদ্দিন আহমেদ মিঠু এই ফুলের সৌন্দর্য বর্ণনা করে বললেন, ‘বসন্ত থেকে বর্ষা পর্যন্ত যখন ফুল ফুটতে থাকে, তখন পুরো বাড়ি ঘ্রাণে ম-ম করে। বাড়িটির সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে গাছটি। একবার ঝড়ে এই গাছ ছুটে নিচে পড়ে যায়। আমরা ভবনের তিন-চারজন মিলে বেশ কষ্ট করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ওপরে তুলে দিই। খুব টেনশনে ছিলাম, টেকে কিনা। কিন্তু ঠিকই টেকে গেল।’
এই ব্যবসায়ীর বাসা নারায়ণগঞ্জের আল্লামা ইকবাল রোডে। ইনডেক্স হাউজিং ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন মঈনুদ্দিন আহমেদ মিঠু। ভবনের জমিটি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি ছিল। পরবর্তী সময়ে তা ডেভেলপার কোম্পানিকে দেন। এই ভবনের সব বাসিন্দার কাছেই মাধবীলতা গাছটি প্রিয় হয়ে গেছে। ভবনের আরেক ফ্ল্যাট মালিক শফিউদ্দিন আহমেদ টিটু বলেন, ‘মানুষের যেমন পোষা প্রাণী থাকে, আমাদের ভবনের সব বাসিন্দার তেমনি এই গাছটি পোষা।  ঝড়বৃষ্টির দিনে গাছটি নিয়ে 
চিন্তায় থাকি।’
ইংরেজিতে হিপটেজ (Hiptage) নামে পরিচিত মাধবীলতার বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গে বাংলার নাম জড়িয়ে আছে। উদ্ভিদ গবেষকরা জানিয়েছেন, এ ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হিপটেজ বেঙ্গালেনসিস (Hiptage benghalensis)। লতানো এ গাছের পাতা উপবৃত্তাকার ও মাথা তীক্ষ্ণ। বাংলাদেশেই ফুলটি জন্মস্থান বলে মনে করা হয়। এটি প্রথম শনাক্ত হয়েছিলও এই ভূখণ্ডে। মাধবীলতার মোট পাপড়ি পাঁচটি। সাদা রঙের চারটি পাপড়ি আকারে ছোট। বিশেষ ধরনের বড় পাপড়ির মাঝে হলুদ ছাপ দেখা যায়।
পেশাদার বিজ্ঞান বক্তা আসিফ বলেন, ‘গাছ লাগানোর কথা বললেই আমাদের মনে পড়ে মাটিতে লাগানো বৃক্ষের কথা। শহরে গাছ লাগানোর জায়গার খুব সংকট। ইনডেক্স হাউজিংয়ের এই মাধবীলতা গাছটি শহুরে বৃক্ষরোপণের উদাহরণ হতে পারে।’
তাঁর ভাষ্য, ‘যেখানে গাছ থাকে সেখানকার তুলনায় গাছহীন জায়গার তাপ ২-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি হয়। এভাবে যদি আমরা লতাগাছ দিয়ে ভবনগুলো ঢেকে দিই তাহলে ভবনগুলোর উত্তাপ কমবে।’
 

আরও পড়ুন

×