ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব
তাগাদা দিয়েও ১৯ মাসের ভাড়া পান না ভবন মালিক

ফাইল ছবি
সাইফুর রহমান, ইবি
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫ | ২৩:২৯
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত ভবনের ভাড়া ১৯ মাস ধরে পরিশোধ করছে না কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ভবনটির মালিক পক্ষ তিন দফায় চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভাড়া চুক্তির মূল ফাইল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হারিয়ে গেছে। যে কারণে ভাড়া পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ ঘটনার দায় কর্মকর্তাদের কেউ স্বীকার করছেন না।
কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারাতলার দ্বিতলবিশিষ্ট ভবনটি দীর্ঘদিন ধরেই এই ক্লাবের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর তিন বছরের জন্য মালিক পক্ষের সঙ্গে ক্লাবের ভাড়া চুক্তি নবায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তখন মাসিক ভাড়া ধরা হয় ৩৬ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ী মাসের ভাড়া মাসেই পরিশোধের কথা। কিন্তু তা মানা হয়নি। চুক্তি নবায়নের পর সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে ৯ মাসের ভাড়া পরিশোধ করা হয়। গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ৫ মে পর্যন্ত মালিক পক্ষ তিন দফায় চিঠি পাঠিয়ে ভাড়া পরিশোধের তাগাদা দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস থেকে ভাড়া চুক্তির মূল ফাইলটি হারিয়ে গেছে। এ কারণে তাগাদা পেয়ে চিঠি পাওয়ার পর মালিক পক্ষের কাছ থেকে চুক্তিপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করে তারা। দুটি সংযুক্ত করে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাড়া পরিশোধের অনুমোদন চেয়ে অর্থ ও হিসাব শাখায় ফাইল পাঠানো হয়। মূল ফাইল না থাকার অজুহাতে সেটি প্রায় চার মাস ওই শাখায় পড়ে থাকে। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে কোনো কর্মকর্তাই ফাইলের খোঁজ নেননি। ৫ মে তৃতীয় দফায় মালিক পক্ষ চিঠি দিলে সেই ফাইল খুঁজে বের করা হয়।
এস্টেট অফিসের প্রধান আলাউদ্দিন ১৭ মে এ বিষয়ে বলেন, ‘মালিক পক্ষ থেকে কাগজপত্রের ফটোকপি নিয়ে নতুন ফাইল তৈরি করে হিসাব শাখায় পাঠিয়েছিলাম। মূল ফাইল না থাকায় একটু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। মাঝখানে ওই ফাইলটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে খুঁজে পাওয়া গেছে। নতুন যে মাসগুলো অতিবাহিত হয়েছে, সেগুলো যুক্ত করে দু-এক দিনের মধ্যে ফের হিসাব শাখায় পাঠাবো।’ তাঁর এই বক্তব্যের দুই সপ্তাহ পেরোলেও গতকাল শনিবার পর্যন্ত ফাইলটি একই অবস্থায় হিসাব শাখায় পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
মূল ফাইল হারানোর দায়িত্ব নিতে চাননি আলাউদ্দিন। তাঁর ভাষ্য, ৫ আগস্টের পর দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। আগেই ফাইলটি হারিয়েছে। দায়িত্ব শেষে আগের প্রধান কিছু বুঝিয়েও দেননি।
এস্টেট বিভাগের সাবেক প্রধান শামসুল ইসলাম ওই দায় অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ফাইল তো থাকার কথা, হারাবে কেন? আগে আমরা ঠিকমতো ভাড়া পরিশোধ করেছি, কোনো সমস্যা হয়নি। তারাই তো আমার থেকে বুঝে নেয়নি।’
অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক আনার পাশা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০২২ সাল থেকে ক্লাব ভাড়ার বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়। তাই বিকল্প খাত থেকে ওই টাকা ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এস্টেট অফিসও নিয়মিত বিল জমা দেয় না। তারা একসঙ্গে কয়েক মাসের বিল জমা দেওয়ায় জটিলতা বাড়ে। এস্টেটের উচিত, মাসের বিল মাসে পরিশোধ করা।
এ বিষয়ে ভবনের মালিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনের কাছ থেকে ফোনে মূল ফাইল হারানোর বিষয়টা জেনেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো মূল ফাইল কীভাবে হারায়!
- বিষয় :
- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়